ডলারের আধিপত্য
- এহতেশামুল হক
- ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
একটি মাত্র দরজা দিয়ে কোনো ঘরে আসা-যাওয়া করা হয়। দুর্ঘটনাবশত ওই ঘরে যদি আগুন লাগে, আর সে আগুনের উৎপত্তি যদি একমাত্র দরজা হয় তাহলে নির্ঘাত ওই ঘরের বাসিন্দাদের জন্য মহাদুর্ভোগ বয়ে আনবে। আগুনের বিস্তৃতি বেশি হলে জীবনহানির আশঙ্কা থাকে ওই ঘরের বাসিন্দাদের। আর যদি বিকল্প দরজা থাকে তাহলে সহজেই বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে অবস্থান করতে পারবেন। এতে আগুনের বিস্তৃতি যত বেশি হোক না কেন। তাই প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বিকল্প থাকতে হয়। থাকতে হয় তার নিজস্ব স্বকীয়তা।
আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের মাধ্যমের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ ভাগ লেনদেন হয় মার্কিন ডলারে। গত এক দশকে আমদানির ক্ষেত্রে লেনদেনের প্রায় ৮৫ শতাংশ মার্কিন ডলারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, আর রফতানির ক্ষেত্রে লেনদেনের প্রায় ৯৭ শতাংশ। মার্কিন ডলারের একক আধিপত্যে বাড়ছে বাণিজ্যিক ঝুঁকি। আমদানি ও রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি নিজেদের মুদ্রা বিনিময়ের সুযোগ থাকলে ঝুঁকি এবং বাণিজ্যিক খরচ দুটোই কমে আসে। কিন্তু ডলারের বিকল্প না থাকায় বাণিজ্যিক ঝুঁকি দিনদিন বাড়ছে, বৈ কমছে না।
বিশ্বব্যাপী ডলারের আধিপত্য বাড়ার পেছনে কারণ অনুসন্ধান করলে সহজেই বোঝা যাবে এর রহস্য। সম্প্রতি বিআইবিএমের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের শক্তিশালী হওয়ার কতগুলো কারণের মধ্যে তাদের আত্মবিশ্বাস, বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা এবং অর্থনীতির আকার অন্যতম। এ ছাড়াও বাংলাদেশের ৮৯ শতাংশ আমদানি পণ্যের বিনিময় সম্পন্ন হয় ডলারের মাধ্যমে। রফতানির ক্ষেত্রে এর পরিমাণ আরো বেশি। প্রায় ৯৮ শতাংশ রফতানির বিনিময় সম্পন্ন হয় মার্কিন ডলারের মাধ্যমে।
ডলারের আধিপত্যের আরো একটি কারণ হলো পারিপার্শ্বিক দেশগুলোর অবস্থা। পারিপার্শ্বিক দেশগুলোর বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশের ডলার ব্যবহারই নিরাপদ। তবে অন্যান্য মুদ্রায় লাভের সুযোগ থাকলে সে দিকেও আগানো যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডিজিএমের মত হলো, সরাসরি মুদ্রা চালু খুবই কঠিন। তার একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, মার্কিন ডলার ছাড়া অন্যান্য দেশের সাথে সরাসরি বাণিজ্যিক লেনদেন খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ চায়নার সাথে একটি অ্যাকাউন্ট চালু করতে আমাদের দেড় বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এরপরেও সেই চুক্তিপত্রের সমস্ত ভাষা চাইনিজ। ইংরেজিতে ভাষান্তর করার কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি আমাদের। এ রকম শর্ত আরোপ করলে যত বড়ই অর্থনীতি হোক না কেন তাদের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেনে সরাসরি মুদ্রার ব্যবহার চালু করা খুবই কঠিন।
বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ডলারের বিকল্প কোনো মুদ্রা এ মুহূর্তে নেই। তবে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে সেই সব দেশের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, যা লেনদেনের খরচ অনেকাংশে কমিয়ে আনবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে আমদানির ক্ষেত্রে ৮৯ শতাংশ ডলারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তবে এক দশকে আমদানি লেনদেনের ৮৫ শতাংশ ডলারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। রফতানির ক্ষেত্রে লেনদেনের ৯৭ শতাংশ ডলারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশে শুধু নয় সারা বিশ্বে একই ধরনের চিত্র। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেনের ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে ডলারের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করা সম্ভব না হলেও আলোচনা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সরাসরি মুদ্রা ব্যবহার করলে খরচ কমবে। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমবে। কিন্তু এখনো ডলারের বিকল্প কোনো মুদ্রা বাজারে চালু নেই। তবে পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলার ব্যবহারই নিরাপদ। তবে ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো মুদ্রা ব্যবহার লাভজনক হলে তা উৎসাহিত করা যেতে পারে।