ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের রেহাই নেই : তারিক আফজাল, প্রেসিডেন্ট ও এমডি, এবি ব্যাংক
- আশরাফুল ইসলাম
- ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
তারিক আফজাল, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। এর আগে তিনি একই ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এবি ব্যাংক ছাড়াও ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক আল-ফালাহ, কানাডার ক্রেডিট ইউনিয়ন, এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতায় প্রায় খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন এবি ব্যাংককে। দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত মন্দ খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ব্যাংকটি আবার সঠিক লাইনে উঠে এসেছে। এতে উজ্জীবিত হয়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আশান্বিত হচ্ছেন আবার দেশের প্রথম সারির ব্যাংকের কাতারে এবি ব্যাংককে দাঁড় করানোর। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ঋণ আমানতের অনুপাত নির্ধারিত সীমার মধ্যে নিয়ে এসেছেন। দেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা ও এবি ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশরাফুল ইসলাম
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারিক আফজাল। এখন পর্যন্ত এসব খেলাপির বিরুদ্ধে ২৭১টি মামলা হয়েছে। এতে প্রায় তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা আটকে আছে। এদের মধ্যে পাঁচজন রাঘববোয়ালও রয়েছেন। বেশ কিছু মামলা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সাথে আপস করা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের মনোভাবও এখন তা-ই। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এবি ব্যাংক দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক। ১৯৮২ সালের ১২ এপ্রিল এ ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে। ইতোমধ্যে ৩৭ বছর পার করেছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে আধুনিক ব্যাংকিংসেবার অনেক ধারণাও এ ব্যাংকের হাত ধরে এসেছে। দক্ষ ব্যাংকার সৃষ্টিতে ব্যাংকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেশের অনেক বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্বের ক্যারিয়ার এবি ব্যাংকের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে। শুধু ব্যাংকারই নয়, বরং বর্তমানে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক আমলা, পুলিশের দায়িত্বশীল অনেক কর্মকর্তার জীবনের প্রথম চাকরি এবি ব্যাংকে ছিল। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ যাত্রায় ভালো ও মন্দ সময় আসে। এবি ব্যাংকও এর ব্যতিক্রম নয়। ভালো-মন্দ মিলিয়েই সামনে এগিয়েছি। মাঝে কিছু সময় খারাপ গেলেও বর্তমানে এবি ব্যাংক ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, সুদের হার, আমানতের সঙ্কটসহ পুরো ব্যাংকিং খাতই অস্থিতিশীল সময় পার করছে। তবে আমানতের সঙ্কট এখন কিছুটা কমেছে। আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখছি। চলতি বছরের শুরুতেও এবি ব্যাংকের আমানত ও ঋণ প্রায় সমান সমান ছিল। কিন্তু বর্তমানে এবি ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের অনুপাত (এডিআর) ৮৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ক্রমেই আমানত বাড়ছে।
তিনি বলেন, এবি ব্যাংকে আমানতকারীদের ২৫ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা জমা আছে। এ থেকে বিভিন্ন খাতে ২৪ হাজার ৯২০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছি। ১০৫টি শাখা, ২৭০টির বেশি এটিএম বুথ ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছি। বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিংসেবা চালু করেছি। আগামীতে এবি ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো আরো বাড়ানো হবে।
এবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষে বড় ধরনের সংস্কার এসেছে। সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যাংকারদের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন হয়েছে। এবি ব্যাংক পর্ষদে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুইজন ডেপুটি গভর্নর আছেন। ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ (রুমি) আলী। তবে সাবেক ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীকে বর্তমানে এবি ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছে সরকার। তিনি সোনালী ব্যাংকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এবি ব্যাংকেই ছিলেন।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষেও বড় পরিবর্তন এসেছে। নতুন এমডির পাশাপাশি নতুন ডিএমডি এসেছেন। ব্যাংকের চলমান এ সংস্কার অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই, প্রত্যেক কর্মী প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করুক। এজন্য সব কর্মীর কাছে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে। সেটি হলোÑ সততার সাথে কাজে গতি আনা। যে কর্মী এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হবেন, তাকে ঝরে পড়তে হবে। সঠিক লোককে সঠিক স্থানে বসাতে চাই।
এবি ব্যাংকের প্রায় সব ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছি। আগামীতে খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া আরো জোরদার করা হবে। ব্যাংকের টাকা নিলে ফেরত দিতে হয়Ñ এ কথার সত্যতা আবার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। শীর্ষ খেলাপিদের ৯০ শতাংশের ঋণ ইতোমধ্যে পুনঃতফসিল করা হয়েছে। তবে বিশেষ সুবিধার আওতায় পুনঃতফসিল করা হয়নি। তাতে সময় বেশি লাগবে। ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে যারা গড়িমশি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে শীর্ষ খেলাপিদের বাধ্য করব।