২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রফতানি

-

একটা সময় বাংলাদেশ ওষুধ আমদানি করলেও এখন একটি রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পরপরই মাত্র ২০ শতাংশ ওষুধ আমরা উৎপাদন করতাম। সময়ের পরিক্রমায় এখন ৯৭ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করছি আমরা।
স্বাধীনতার পরপর হাঙ্গেরির কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি পাট ও অন্যান্য কাঁচামালের বিনিময়ে বাংলাদেশে ওষুধ রফতানি করে এবং ইচ্ছামতো বাণিজ্য করে যায়। কিন্তু ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে বিপ্লব এনে দেয়। এ খাতে দেশীয় বিনিয়োগ আসে অপ্রত্যাশিত হারে। ওষুধ নীতি প্রণয়নের ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ওষুধ কোম্পানির সংখ্যা দেড় শতাধিক ছাড়িয়ে যায়। ওষুধ রফতানিও শুরু হয় বিদেশে। ২০১৪ সালে ৮৭ দেশে ওষুধ রফতানি হয় ৬০০ কোটির টাকার বেশি। আর ওষুধ তৈরির কাঁচামাল রফতানি ১৬ কোটি কোটি টাকার।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৬৯টিরও বেশি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা রয়েছে। দেড় শতাধিক কারখানা নিয়মিত ওষুধ উৎপাদন করছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, সর্বমোট ২৬৯টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ কোম্পানি বছরে ২৪ হাজার রকমের ১২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন করছে। বাংলাদেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি ভ্যাকসিনও উৎপাদন করছে। এসব কোম্পানি নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করছে। এসবই জেনেরিক ওষুধ। বিদেশী ব্র্যান্ড কোম্পানির ওষুধ প্যাটেন্ট রাইট থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ বলে সর্বশেষ ওষুধটিও উৎপাদন করতে পারছে। এ ওষুধগুলোই দেশের বেশ কিছু কোম্পানি রফতানি করছে। আবিষ্কৃত কোনো ওষুধ বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর নেই। এ খাতে অনেক পিছিয়ে আমাদের ওষুধ শিল্প।
ওষুধ শিল্প খাতে নতুন নতুন উদ্ভাবন আর বিস্ময়কর সব সাফল্য রয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রেও রফতানি করা হচ্ছে। এক সময় ভাবা যেত না যে তৃতীয় বিশ্বের এই দরিদ্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাজারে তাদের ওষুধ বিক্রি করতে পারবে। বাংলাদেশ ক্যান্সার ও কিছু হরমোন জাতীয় ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ আমদানি করে না। এসবই সম্ভব হয়েছে এ খাতের মেধাবী উদ্যোক্তা, ফার্মাসিস্ট, কেমিস্ট, বায়োকেমিস্ট, বায়োটেকনোলজিস্ট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের নিরলস পরিশ্রম এবং সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর ধারাবাহিক সহযোগিতার কারণে।
বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো এখন শুধু ওষুুধ উৎপাদনেই নিজেদের সম্পৃক্ততা সীমাবদ্ধ রাখেনি, আন্তর্জাতিক বাজারকে সামনে রেখে আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ করেছে প্রথম সারির ওষুধ কোম্পানি। আমাদের কোম্পানিগুলো বায়োহাইজিন ইকুইপমেন্ট তৈরি করছে আবার ওষুধের কাঁচামালও তৈরি করছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৫ সালে ১২০টি দেশে ৮১২ কোটি ৫১ লাখ টাকার ওষুধ, কাঁচামাল ও মেডিক্যাল ডিভাইস রফতানি করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ১২৭টি দেশে বাংলাদেশের ৪১টি কোম্পানির ওষুধ, কাঁচামাল ও মেডিক্যাল ডিভাইস রফতানি করা হয়েছে দুই হাজার ২৪৭ কোটি টাকার কিছু বেশি। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে রফতানি দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে এশিয়ার ৩৭টি, দক্ষিণ আমেরিকার ২১টি, আফ্রিকার ৩৪টি, উত্তর আমেরিকার ৪টি, ইউরোপের ২৬টি ও অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি দেশ রয়েছে।
দেশীয় কোম্পানির মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মা ১৫৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, ইনসেপ্টা ৮৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ও স্কয়ার ৭৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ওষুধ রফতানি করেছে। এ ছাড়া ওষুধ রফতানি করেছে দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, এ্যারিস্টো ফার্মা, রেনেটা, এসকেএফ ফার্মা বাংলাদেশ, এসিআই, পপুলার, বায়োফার্মা, অপসোনিন, বিকনফার্মা, ড্রাগস ইন্টারন্যাশনাল, হেলথকেয়ার ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, জেসন, নাভানা, জেনারেল ফার্মা, ডেল্টা ফার্মা, ইবনে সিনা, রেডিয়ান্ট ফার্মা, নভো হেলথকেয়ার, নিপ্রো জেএমআই, ইডিসিএল, এ্যামিকো ল্যাবরেটরিজ, জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল লিমিটেডসহ আরো কয়েকটি কোম্পানি। বিদেশে রফতানি হয় ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইনজেকশন ও ইনহেলার উল্লেখযোগ্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement