০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১, ১ শাবান ১৪৪৬
`

বাহারি ক্রেডিট কার্ড

-

দেশে জামানতবিহীন ঋণের কদর বাড়ছে। এ জামানতবিহীন ঋণ নেয়া হয় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। জামানতবিহীন এ ঋণের যেমন সুবিধা আছে। তেমনি রয়েছে ঝুঁকি। দেশে নানা ধরনের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ ভিসা, মাস্টার কার্ড ইত্যাদি ক্রেডিট কার্ড প্রচলিত আছে বাংলাদেশে। প্রতি মাসে কারো আয় ৩০ হাজার টাকা হলেই ব্যাংক তাকে টাকা ধার দেবে। সে টাকা ওই ব্যক্তি ধীরে ধীরে খরচ খরতে পারবেন। আর সেটা নগদে উত্তোলন করে হোক বা কেনাকাটা করে। হতে পারে দেশে বা বিদেশে। ৪৫ দিনের মধ্যে সে ধার শোধ করলে কোনো সুদও গুনতে হবে না। এ সুবিধা পেতে কোনো জমি বন্ধক রাখার প্রয়োজন হবে না। ক্রেডিট কার্ডেই মিলবে এই সুবিধা।
তবে সুদ না গুনতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের হতে হবে অনেক হিসেবি, না হলে ব্যাংকের চড়া সুদ গুনতে হবে। সময় মতো সে ঋণ শোধ না হলে আইনি ঝামেলাও পোহাতে হতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় ১২ লাখ গ্রাহকের কাছে ক্রেডিট কার্ড এখন নিত্যসঙ্গী।
আর এ জন্যই ব্যাংকগুলো এখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যান্ডের কার্ড সেবা নিয়ে আসছে। দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয় দ্য সিটি ব্যাংকের হাত ধরে। ব্যাংকটি ২০০৯ সাল থেকে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড এ দেশে জনপ্রিয় করে ক্রেডিট কার্ডকে গ্রাহকের আস্থায় নিয়ে এসেছে। ব্যাংকটি অ্যামেক্স কার্ডের এ দেশের একমাত্র প্রতিনিধিও। তাই ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের বেশির ভাগই তাদের গ্রাহক।
বর্তমানে দেশে ৪০টির মতো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় সবাই ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্র্যান্ডের মাধ্যমে কার্ড সেবা দিচ্ছে। তবে এর বাইরে কয়েকটি ব্যাংক কার্ড সেবাকে অভিনবত্ব দিতে অন্য ব্র্যান্ডের কার্ডও এনেছে। সিটি ব্যাংক এমেক্স কার্ড, প্রাইম ব্যাংক জেবিসি কার্ড, ইস্টার্ন ব্যাংক ডিনার্স ক্লাব কার্ড, ডাচ-বাংলা ব্যাংক নেক্সাস পে-কার্ড ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ইউনিয়ন পে ইন্টারন্যাশনালের সেবা দিচ্ছে।
এসব ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা যায় বিশ্বের অনেক দেশে। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমান ভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মিলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ।
বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করে। ওই সময়ে একটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ন্যাশনাল ব্যাংকও ক্রেডিট কার্ড চালু করে। ক্রেডিট কার্ড সেবায় সিটি ব্যাংকের পরে রয়েছে ইস্টার্ন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্র্যাক ব্যাংক।
ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক দিন দিন বাড়ছে। তবে এ বাজার আরো অনেক বড় হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও নিয়মকানুন শিথিল করা। এসব কার্ড ব্যবহার করা যায় সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা সাড়ে ১০ হাজার এটিএমে। এ ছাড়া ৪৫ হাজার পয়েন্ট অব সেলসে এসব কার্ড ব্যবহার করা যায়। ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকেরা প্রতি মাসে ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন করেন। আর ৭০ শতাংশ গ্রাহকই নিয়মিত কিস্তি শোধ করেন, এ কারণে তাদের কোনো সুদ গুনতে হয় না।
নীতিমালা সংশোধন : ক্রেডিট কার্ডের নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। কমানো হয়েছে গলাকাটা সার্ভিস চার্জ। নীতিমালা সংশোধনের ফলে কোনো ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে এসএমই ঋণের সুদের অতিরিক্ত ৫ শতাংশের বেশি আদায় করতে পারছে না। তবে যারাই এ নীতিমালা লঙ্ঘন করছে তাদেরকেই জরিমানা গুনতে হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রতা আকৃষ্ট করতে বাহারি ধরনের ক্রেডিট কার্ড বাজারে ছাড়ছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান মতে, ইতোমধ্যে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ১ লাখ ছেড়ে গেছে। আর এ কার্ডের মাধ্যমে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে জামানতবিহীন এই ক্রেডিট কার্ড ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণ অন্যান্য ঋণের তুলনায় বেশি খেলাপি হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া এই ঋণ বিতরণে অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক নিয়মনীতি সঠিকভাবে পালন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
কেউ ভুয়া স্যালারি সার্টিফিকেট দিয়ে এবং ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ নিয়ে পালিয়ে আছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেই সব ভুয়া গ্রাহককে খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেশী এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এই কার্ড ব্যবহার করার জন্য গ্রাহকদের একই কার্ড অথবা দুই ধরনের কার্ড দিয়ে আসছে। এসব কার্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনেক ব্যাংক সর্বোচ্চ শতকরা ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত সুদ আদায় করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, জামানতবিহীন ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণ বাড়ছে ব্যাংক খাতে। কেননা এমনিতেই জামানত নিয়েও ব্যাংকের বড় বড় ঋণের বিপরীতে আদায় হয় না। হলমার্ক, বিসমিল্লাহসহ বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ধকল ব্যাংক খাতকে এখনো ভোগাচ্ছে। এর বাইরে জামানতবিহীন ঋণ বেড়ে যাচ্ছে, যা ঝুঁকির পরিমাণ আরো বাড়ানো হচ্ছে এ খাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বেশি ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ শ্রেণী-বিভাজন করা যাচ্ছে না। এর ফলে পরিদর্শন করতে গিয়ে নানা বিপত্তির মুখে পড়ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শকরা। গ্রাহকদের সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণসীমা বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সাধারণ গ্রহকদের এক লাখ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণসীমা দেয়া হচ্ছে। জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার মাধ্যমে ঋণঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলে নতুন করে ঝুঁকির মুখে ফেলছে ব্যাংকিং খাতকে। পরিস্থিতি সীমার বাইরে যাওয়ার আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল