মন্ত্রণালয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অবশেষে ট্যানারিতে চামড়া বিক্রির সিদ্ধান্ত
- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৯ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
নিজেদের অবস্থান থেকে অবশেষে সড়ে দাঁড়ালেন পোস্তার কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা। বেশ কয়েকদিন ধরে তারা বলছিলেন, পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে এবার ট্যানারি মালিকদের কাছে তারা চামড়া বিক্রি করবে না। কিন্তু এবার তারা বলেছেন, আজ থেকে ট্যানারিতে তারা চামড়া বিক্রি করবেন। গতকাল বিকেলে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের উপস্থিতিতে চামড়া খাতের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত আসে। বিকেল ৩টা ২০ মিনিট থেকে শুরু হওয়া এই বৈঠকটি শেষ হতে ৬টা পেরিয়ে যায়। শিল্পমন্ত্রী অভিযোগ করেন, মওসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা মিডিয়াকে মিসগাইড করেছে। অন্য দিকে, বাণিজ্য সচিব বলেছেন, যারা দাম না পেয়ে চামড়া পুঁতে ফেলেছেন তারা কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেছেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত আজ থেকেই চামড়া বিক্রি শুরু করা হবে। ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা মহোদয় এফবিসিসিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী ২২ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে এ নিয়ে আলোচনা হবে দুই পক্ষের মধ্যে। সেখান থেকেই ফয়সালা করে দেবে।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, আসল কথা হচ্ছে কাঁচা চামড়া এক্সপোর্ট ছেলে খেলা নয়। কাঁচা চামড়া রফতানি করে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল। আমরা কাঁচা চামড়া রফতানি জীবনে করেনি। এখন নতুন করে কাঁচা চামড়া রফতানি করতে গেলে কিছু কিছু দেশের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। সেটা আমাদের নেই। এটা নিতেও দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।
তিনি বলেন, রফতানির লাইসেন্সও নেই। এসব প্রক্রিয়া করতে অনেক সময়ের ব্যাপার। যেহেতু ট্যানারি মালিকরা বলেছেন আমাদের বকেয়া টাকাগুলোর ব্যবস্থা তারা করবে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, ট্যানারি মালিকদের কাছে আমরা চামড়া বিক্রি শুরু করে দিলাম। না হলে যে চামড়াগুলো লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেশের সম্পদকে বাঁচাতে চাই, এ শিল্পকে বাঁচাতে চাই। আমরা আজ থেকে আবার আগের মতো ব্যবসা শুরু করে দেবো। তবে আমাদের আবেদন থাকবে যে, ট্যানারি মালিকরা যেনো আমাদের টাকাগুলো তাড়াতাড়ি পরিশোধ করে দেয়।
ট্যানারি মালিকদের নিকট আপনার কত টাকা পাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারা দেশে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। বৈঠকের শুরুতে বাণিজ্য সচিব মো: মফিজুল ইসলাম বলেন, ২০ তারিখ থেকে চামড়া কেনার কথা বলেছিলেন ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশেন। ফরিয়া ও আড়তদারদের মধ্যে একটি গ্যাপ রয়েছে বলে ধারণা ছিল। মাঠপর্যায়ে বলা হলো চামড়া সংরক্ষণের জন্য। এ পরিস্থিতিতে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ক্রয়ের কথা বলে, তারা কিছু কিছু ক্রয় করেছে তবে তারা সেরকমভাবে কিনেননি।
গরমে ১০ হাজার চামড়া নষ্ট হয়েছে : শিল্পমন্ত্রী
এবারের কোরবানির ঈদে গরমের কারণে ১০ হাজার পিস চামড়া নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। তার দাবি, এক কোটি চমড়ার মধ্যে এ বছর ১০ হাজার পিস চামড়া নষ্ট হয়েছে, যা নগণ্য ব্যাপার। গতকাল রোববার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরকার, ট্যানারি মালিক, আড়তদার ও কাঁচা চামড়া সংশ্লিষ্টদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বললেন মন্ত্রী।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, একটি দেশ যখন সম্ভাবনার দিকে এগোয়, তা ব্যাহত করতে একটা চক্র কাজ করে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এক কোটি চামড়ার মধ্যে প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। এবার যেহেতু গরম পড়েছে, সে জন্যই ১০ হাজার পিস চামড়া নষ্ট হতে পারে। বৈঠকে দেনা পাওনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে কিন্তু তারা পাওনার জন্য কখনো কমপ্লেইন করেনি। সেখানে যে আস্থার বিষয়, সেটি নিয়ে কাজ করেছে। মওসুমি ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত নন, তখন তারা না বুঝে পুঁজি হারালে তাদের মাথা নষ্ট হয়। এ ধরনের ব্যবসায়ীরাই মিডিয়াকে মিসগাইড করেছেন।
চামড়া শিল্পে কোনো সমস্যা নেই দাবি করে মন্ত্রী বলেন, চামড়ার বিষয়ে নীতিমালা হচ্ছে, আর আজকের বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হয়েছে। আগামী ২২ তারিখ তারা বসে সিদ্ধান্ত নেবে। এটা গতানুগতিক, এখানে তেমন কোনো সমস্যা নেই। আজকেই সব সমাধান হয়েছে। চামড়া তেমন ওয়েস্টেজ নেই। চামড়া কেনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এখানে কাজ করেছে বলে জেলা থেকে যারা এসেছেন তারা জানিয়েছেন। এগুলো আমরা গুরুত্ব দেই না। আমরা এ বিষয়ে সচেতন। এখন চামড়া পুড়িয়ে ছবি দিলে আমাদের কিছু করার নেই। চামড়া রফতানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এটা কাঁচামাল, রফতানি করা, একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। আমরা প্রয়োজন মনে করলে রফতানি করব। রফতানি করব নাকি করব নাÑ সে সিদ্ধান্ত নেবো অবস্থা বুঝে।