১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

দুর্গত জনপদে চলছে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ

-

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতি কম উন্নতি হলেও কোথাও অবনতির খবর নেই। ইতোমধ্যে কক্সবাজারকে বন্যামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় রাস্তা-ঘাট জেগে উঠেছেÑ এতে বেরিয়ে আসছে রাস্তাঘাট, ক্ষত-বিক্ষতের চিহ্ন। তাই নিরূপণ শুরু হয়েছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। প্রাথমিক মূল্যায়নে ফেনীতে বন্যায় শুধু সড়কেই ক্ষতি হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। নোয়াখালীতে প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি হয়েছে ৩০৮ কোটি টাকা। লক্ষ্মীপুরেও প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে অনুরূপ। এদিকে দুর্গত এলাকায় ত্রাণতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। চিকিৎসক টিমগুলোও পানিবাহিত রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধে তৎপর রয়েছে।

ফেনীতে বন্যায় সড়কে ক্ষতি ১৪০ কোটি টাকা
বাসস জানায়, এবারের বন্যায় ফেনীতে এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের আনুমানিক ১৪০ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতর হতে প্রাপ্ত তথ্যে এসব ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভয়াবহ বন্যায় জেলার বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, তৈরি হয়েছে ঝঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি। পানির স্রোতে একাধিক সড়ক ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যোগাযোগব্যবস্থা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) দেয়া তথ্যমতে, জেলার ছয় উপজেলায় এলজিইডির চার হাজার ৩৫৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে তিন হাজার ৩০৫ কিলোমিটার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আনুমানিক ৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দফতরটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাহমুদ আল ফারুক বলেন, বন্যার ভয়াবহতা সব জায়গায় আঘাত করলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিচু এলাকাগুলো। বন্যায় জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক পানিতে নিমজ্জিত ছিল। তার মধ্যে প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের বেশি সড়কের বিভিন্ন অংশে ভেঙে গেছে। প্রায় ৪০টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার সাথে প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছি।

কুমিল্লায় প্রাণিসম্পদে ৩০৮ কোটি টাকার ক্ষতি
বাসস আরো জানায়, বন্যায় কুমিল্লার ১৪টি উপজেলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব উপজেলায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক য়তি হয়েছে। জেলায় এ খাতে মোট তির পরিমাণ ৩০৮ কোটি টাকা। এবারের ভয়াবহ বন্যা অতীতের যেকোনো তিকে ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল সকালে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, বন্যার কারণে গত প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা কয়েক ফুট পানির নিচে প্লাবিত হয়। নিচু এলাকাগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়েছে।
জেলাজুড়ে বন্যায় প্রাণিসম্পদে চার হাজার ২১৩টি গবাদিপশুর খামার তিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া জেলার দুই লাখ ৯ হাজার ৯১৪টি বিভিন্ন শ্রেণীর গবাদিপশু তিগ্রস্ত হয়েছে। যার বাজারমূল্যে পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ কোটি টাকার বেশি। তার মধ্যে তিগ্রস্ত গরুর সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার ৬২২টি, ১৬টি মহিষ, ৩০ হাজার ৮৯২টি ছাগল, ৬৯৩টি ভেড়া। মারা গেছে ৩৫টি গরু, তিনটি মহিষ, ১৭১টি ছাগল এবং সাতটি ভেড়া।

হাঁস-মুরগির মধ্যে দুই হাজার ২১৮টি খামারে ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৯টি হাঁস-মুরগি তিগ্রস্ত হয়েছে। যার বাজারমূল্যে ৩৯ কোটি টাকা। এসবের মধ্যে ২১ লাখ সাত হাজার ৩৫৩টি মুরগি, ৩১ হাজার ৬৯৩টি হাঁস তিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৪২টি মুরগি এবং ২ হাজার ১৬০টি হাঁস। প্লাবিত হয়েছে ২ হাজার ১ দশমিক ৫ একর চারণভূমি। খাদ্যের মধ্যে ২ হাজার ৬০৩ টন পশুপাখির দানাদার খাদ্য বিনষ্ট হয়েছে। যার বাজারমূল্য ৫৯ কোটি টাকা। ৫৫ হাজার ৪৩৪ টন পশুপাখির খড় বিনষ্ট হয়েছে। যার বাজারমূল্য ৮৯ কোটি টাকার বেশি। এছাড়াও ৫৮ হাজার ৭৫১ টন ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। যার বাজারমূল্য ৭০ কোটি টাকা। মৃত পশুপাখিতে য়তির পরিমাণ এক কোটি ৬০ লাখ টাকা।
বাসস আরো জানায়, জেলার ৫টি উপজেলা বন্যার কারণে অবকাঠামো ও খাদ্য বিনষ্টসহ খামারি-গৃহস্থদের পশুপাখির মৃত্যু হয়েছে। এতে খামারিসহ গৃহস্থরা বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ে পড়েছেন।

এতে আট কোটি ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকার ব্যাপক য়তি হয়েছে। এখনো পাঁচ লাখ ১১ হাজার ১১০টি পশু-পাখি বন্যাকবলিত রয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে য়তির তথ্যটি নিশ্চিত করছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বন্যার পানির কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে খামার ও গৃহস্থের এক লাখ ৬০ হাজার ২১৩টি পশুপাখি মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি গরু, ১৭৫টি ছাগল, ১৭টি ভেড়া ও একটি মহিষ এবং এক লাখ ৫৯ হাজার ১০টি মুরগি ও ৯৭৫টি হাঁসের মৃত্যু হয়েছে। এতে দুই কোটি ৮৬ লাখ ৩ হাজার টাকার তি হয়েছে। গবাদিপশুসহ ৩০৩টি খামারের অবকাঠামোগত তি ৭৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা, হাঁস-মুরগিসহ ৪২৩টি খামারের অবকাঠামোগত তি হয়েছে তিন কোটি ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া এক কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকার পশুপাখির খাদ্য বিনষ্ট হয়েছে বন্যায়।

আরো জানানো হয়েছে ৯০০ গবাদিপশু ও ১২ হাজার ৯০০ হাঁস-মুরগিকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ৮৪১টি গবাদিপশু এবং ৩০ হাজার ৩৬৫টি হাঁস-মুরগিকে।
বাসস আরো জানায়, পানি নেমে যাওয়ায় কক্সবাজার জেলাকে বন্যামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বন্যাকালীন তাণ্ডবে ব্যাপক য়তির চিহ্ন এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। চলছে সেই য়তি নিরূপণের কাজ।
কক্সবাজারে অতিবৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে জেলার ছয়টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন তিগ্রস্ত হয়। জেলায় অর্ধলাখ বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তিগ্রস্ত হয়েছে দেড় লাধিক মানুষ। রামু উপজেলায় বাঁকখালী নদীতে ভেসে গিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা নদীতে কাঠ সংগ্রহ করছিল বলে সূত্র জানায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement