ঝিনাইদহের আরেক আ’লীগ নেতা মিন্টু আটক

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় জড়িত সন্দেহে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল। আনার হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আক্তারুজ্জামান শাহীনের সাথে মিন্টুর যোগাযোগ ছিল বলে দাবি ডিবির।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যার ঘটনায় ঝিনাইদহের অনেক রাজনৈতিক নেতার পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসব সন্দেহভাজন নেতাকে পর্যায়ক্রমে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এর আগে সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেছিলেন, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ হলে অনেকে গ্রেফতার হতে পারেন। সেইসাথে এমপি আনারের লাশ শনাক্ত হলে অনেক কিছুই প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
ঝিনাইদহের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা নজরদারিতে : আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঝিনাইদহের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার পর আসামিরা কার কার কাছে শেয়ার করেছেন তা তদন্ত চলছে। ছবি দিয়ে কেউ আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে কিনা, কাদের মাধ্যমে লাভবান হয়েছে, সব বিষয় তদন্ত করে বের করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকে নজরদারিতে রাখছেন, একজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডেও এনেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন। বাংলাদেশ ও ভারত মিলে দু’টি মামলা হয়েছে। দুই দেশেরই উদ্দেশ্য অভিন্ন। আমরা কাজ করছি। আসামির সাথে আমরা কথা বলেছি।
তিনি বলেন, আমরা সব তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে মনে করেছি, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ জন্য তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনেছি। তার রিমান্ড চলছে, তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ঘটনা ডিবি-ওয়ারী বিভাগ তদন্ত করছে।
হত্যাকাণ্ডের পর দুই কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে কিনা প্রশ্নে হারুন বলেন, এগুলো আমরাও শুনেছি, সবকিছু তদন্ত করছি। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন বাংলাদেশ থেকে দিল্লির পর কাঠমান্ডু, এরপর দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। তাকে আমরা ধরতে না পারলেও মোটামুটি বাকি সব আসামির বিষয়ে জানতে পেরেছি। আসামিদের অনেককেই গ্রেফতার করেছি। ভারতে জিহাদ গ্রেফতার হয়েছে। এ ছাড়া কাঠমান্ডু থেকে গ্রেফতার সিয়ামকে ভারতে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রয়োজন মনে করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাব।
হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের ব্যবহৃত দু’টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে তার এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার পাঁচ দিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউ টাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজিম খুন হন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ।