১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাজশাহীতে কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে রেলের কয়েক কোটি টাকার জমি বেহাতের শঙ্কা

-


রাজশাহীতে বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গাফেলতিতে কয়েক কোটি টাকার জমি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নগরীর ১৯নং ওয়ার্ডের আওতাধীন হাজরাপুকুর এলাকায় রেলওয়ের অন্তত ১২ কাঠা জমি স্থানীয় আ’লীগের এক নেতা ও রেলওয়ের এক সাবেক কর্মচারীর নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আর রেলওয়ের ছেড়ে দেয়া জায়গা সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে নিচ্ছে দখলদাররা। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
এ দিকে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি উদ্ধার ও দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা সম্প্রতি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক বরাবর গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একইসাথে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, রেলওয়ের মহাপরিচালক, প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও প্রধান প্রকৌশলী বরাবর এর অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন নগরীর চন্দ্রিমা থানার শিরোইল কলোনি এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার, স্থানীয় বাসিন্দা জেসমিন, আকলিমা, আবুল হোসেন, নূরুল ইসলামসহ প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষ।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, শিরোইল কলোনি এলাকায় রেলওয়ের হাজরাপুকুর ভরাট করে সেখানে কারখানা তৈরি করেছেন কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। এ ছাড়া তার বেয়াই খাদেমুল ইসলাম দোতলা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। দখল করা জমির পরিমাণ অন্তত ১২ কাঠা। বর্তমানে এই জমির বাজার মূল্য আনুমানিক তিন কোটি টাকা বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ দিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কামরুল ইসলাম ক্ষমতাসীন আ’লীগের রাজশাহী নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক এবং খাদেমুল ইসলাম রেলওয়ের সাবেক কর্মচারী। কামরুল ইসলাম ও খাদেমুল ইসলাম সম্পর্কে বেয়াই হন। তারা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমনেরও আত্মীয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হাজরাপুকুর এলাকার এই জমি দখলমুক্ত করা বা বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বারবার সুরাহা করার আশ^াস দেয়া হলেও রহস্যজনক কারণে বাস্তবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো নেয়া হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৯ নং ওয়ার্ড আ’লীগের অন্যতম এক শীর্ষ নেতা মাস চারেক আগে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে কামরুল ইসলাম ও খাদেমুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমি দখলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এ নিয়ে তখন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল।
আ’লীগের ওই নেতা জানিয়েছিলেন, বছর দশেক আগে হাজারাপুকুর এলাকার একটি পুকুর ভরাট করেন আ’লীগ নেতা কামরুল ইসলাম ও রেলওয়ের সাবেক কর্মচারী খাদেমুল ইসলাম। এরপর সেখানে একপাশে ব্যবসায়িক কারখানা নির্মাণ করেন কামরুল ইসলাম। এই কারখানায় লোহার দরজা, জানালাসহ গৃহ নির্মাণের বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করা হয়। কামরুল ইসলাম এই কারখানায় ব্যবসা করে প্রতি মাসে বিপুল টাকা আয় করেন। আর কামরুল ইসলামের কারখানার আরেক পাশে রেলওয়ের জমিতে দুই তলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন খাদেমুল ইসলাম।
জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা ও লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষরকারী আকলিমা বলেন, রেলওয়ের অন্তত ১২ কাঠা জমি কামরুল ইসলাম ও খাদেমুল ইসলাম দখল করে রেখেছেন। তবে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরে কামরুল ইসলাম দখলে রেলওয়ের যতটুকু জমি দখলে রেখেছেন তার মধ্যে সামান্য কিছু অংশ ছেড়ে দিলেও পুরোপুরি ছাড়েননি। দখল করা ১২ কাঠা জমির বেশির ভাগ অংশই এখনো তাদের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তাদের বাসার বিল্ডিংয়ের কিছু অংশও রেলওয়ের জমিতে পড়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতনভাবে জানলেও এই জমি উদ্ধার না করে কামরুলের দখলে ছেড়ে দিয়ে রেলওয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছে বলেও অভিযোগ করেন আকলিমা। শুধু আকলিমা নয়, এমন অভিযোগ স্থানীয় আরো অনেকের।

জানতে চাইলে নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম দাবি করেন, রেলওয়ের জমি দখলের অভিযোগ সঠিক নয়। রেলওয়ের জমিতে যে স্থানে আমার কারখানা ছিল সেখান থেকে তা সরিয়ে নিয়েছি। এখন সেখানে রেলওয়ে বাউন্ডারি ওয়াল দিচ্ছে।
তবে রেলওয়ের সাবেক কর্মচারী খাদেমুল ইসলামের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে পশ্চিামাঞ্চল রেলওয়ের কানুনগো মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তারা রেলওয়ের জমি দখল করে থাকলে কর্তৃপক্ষ দখলমুক্ত করবে। তিনি রেলওয়ের কিছু জমি কামরুল ও খাদেমুলের দখলে থাকার কথা স্বীকার করলেও ঠিক কতটুকু পরিমাণ জমি তারা দখলে রেখেছেন সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, রেলওয়ের জমি দখলের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, কেউই রেলওয়ের জমি দখল করতে পারবে না। তদন্তে রেলওয়ের জমি দখলের বিষয়টি প্রমাণিত হলে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement