১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা

-

সমুদ্রপথে ‘অবৈধভাবে’ ইতালি যাওয়ার সময় তিউনিসিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত আটজনের লাশ বৃহস্পতিবার দেশে পৌঁছেছে। বেলা ১২টা ২০ মিনিটের দিকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তাদের লাশের কফিনগুলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের পৌঁছে। এ সময় লাশ নিতে বিমানবন্দরে ভিড় করেন নিহতের স্বজনরা। কিন্তু ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে। গতকাল শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে নিহত আটজনের মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুরের রাজৈরের বাসিন্দা। বাকি তিনজন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের। নিহতরা হলেন মাদারীপুরের রাজৈরের কোদালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর ছেলে সজীব কাজী, পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ, সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী, উত্তরপাড়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস, কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন মিয়ার ছেলে রিফাদ, ফতেয়পট্টি এলাকার মো: রাসেল ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইসরুল কায়েস আপন।
স্বজনরা জানান, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। প্রথমে তারা বিমানযোগে লিবিয়া পৌঁছায়। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে রওনা দেয়। মাঝপথে তিউনিসিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে আগুন ধরে যায়। পরে ভূমধ্যসাগরেই ডুবে যায় নৌকাটি। এতে আরো আরোহীদের সাথে তারাও প্রাণ হারায়। কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড।
স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের গজারিয়া গ্রামে রহিম শেখ ও সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা করে নেয়। পরে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালি পাঠালে ঘটে এই দুর্ঘটনা।
নিহত মামুন শেখের বড়ভাই সজীব শেখ বলেন, আমার ভাইসহ আট যুবকের লাশ দেশে এসেছে। এখন লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যালে নিয়েছে। একবার তিউনিসিয়ায় ময়নাতদন্ত হয়েছে, এরপরও আমাদের দেশে এটা করার প্রয়োজন ছিল না। বাড়িতে সবাই লাশের জন্য অপেক্ষা করছে, কখন যে যেতে পারব বুঝতে পারছি না।
নিহত সজীবের বাবা মিজানুর রহমান কাজী বলেন, ছেলে মারা গেছে ফেব্রুয়ারি মাসে এখন মে মাস। লাশ দেশে আসলো দেরি করে, তারপরও ভোগান্তি। কখন আমার ছেলের মুখটা দেখতে পাবো, সবাই লাশের অপেক্ষা করছে।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, তিউনিসিয়ায় দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আইনগত সহযোগিতা চাইলে করা হবে। এরই মধ্যে সরকারিভাবে লাশ দেশে পৌঁছেছে। পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement