১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদে সৌন্দর্যের হাতছানি

দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদে সৌন্দর্যের হাতছানি -


ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি যেন সৌন্দর্যের আকর। অনেকের কাছে এটি হাইওয়ে মসজিদ নামেও পরিচিত। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৩ তলা বিশিষ্ট এই মসজিদে পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। সুউচ্চ মিনার আর হালকা হলুদে (অফ হোয়াইট) শুভ্র রাঙা মসজিদটি এলাকার দৃশ্যপটই বদলে দিয়েছে। মনোরম পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই সেখানে ছুটে যান। নামাজ আদায় করে অপার্থিব প্রাপ্তিতে মন ভরিয়ে নেন। আধুনিক, চিত্তাকর্ষক নিদর্শন ও উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মসজিদ ও ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র সকলের কাছে হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় স্থান।

পদ্মা সেতু হয়ে এশিয়ান এক্সপ্রেসওয়ের শেষ সীমানা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা। ফলে আগের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই এলাকা। একসময়ের গোল চত্বরটিতে যান চলাচলের সুবিধার্থে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইওভার। চার দিকজুড়ে সুপ্রশস্ত ৮ লেনবিশিষ্ট এশিয়ান এক্সপ্রেসওয়ের এই ফ্লাইওভারটিতে প্রতিদিন দিনরাতে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে।

ইসলামী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলার মতো এখানেও গড়ে তোলা হয়েছে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র। এমন একটি নান্দনিক মসজিদ তৈরি হওয়ায় স্থানীয়রাও আনন্দিত। তারা বলছেন, মসজিদটি এলাকার সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি করে দিয়েছে।
ভাঙ্গা টাউনের বাসিন্দা এটিএম ফরহাদ নান্নু বলেন, হলুদাভ বর্ণের মসজিদটি শুভ্রতার প্রতীক। মসজিদটির দৃষ্টিনন্দন বহিরাবরণ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। নিয়মিত মুসল্লিগণ ছাড়াও দূরদূরান্ত হতে আসা পর্যটকেরা এখানে নামাজ পড়তে আসেন। জুমার দিনে মুসল্লিদের ভিড় জমে যায়। মামুনুর রশীদ বলেন, এই মসজিদটি নির্মাণের পরে এখানকার পরিবেশের দৃশ্যপটই বদলে গেছে। অবশ্য এখনো এক্সপ্রেসওয়ের পাশে কিছু স্থাপনা রয়েছে যেগুলো এই মসজিদের সৌন্দর্য ম্লান করে। এ ছাড়া মসজিদের সামনের পুকুরটিও সংস্কার না করায় তা মসজিদটির লুক নষ্ট করে দেয়। এছাড়া নিচু জমিতে মাটি ভরাট করে মসজিদ নির্মাণ করায় কয়েকটিস্থানে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে।

গত বছরের ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এখন এটি ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ হওয়ায় এর সুফল ভোগ করছেন দেশ-বিদেশের যাত্রী ও পর্যটকেরা। মসজিদটিতে একসাথে ৯০০ মুসল্লি নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকছে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ মসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য অনুরোধ জানান মুসল্লিরা।

ভাঙ্গা উপজেলা মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ফিল্ড সুপারভাইজার এইচ এম রুহুল আমীন বলেন, প্রায় ৪০ শতাংশ জমির উপরে তৈরি ৩ তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতি কেন্দ্রে নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথকভাবে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুরো ভবনে রয়েছে সিসি ক্যামেরা ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। লাইব্রেরি, গবেষণা ও দ্বীনি দাওয়া কার্যক্রম, কুরআন হেফজ, শিশু কক্ষ, অতিথিশালা, বিদেশী পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ প্রভৃতির ব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য ইমাম-মুয়াজ্জিনের সাথে নিযুক্ত রয়েছেন ইসলামী ফাউন্ডেশনের দু’জন কর্মকর্তা ও সহকারী। সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সেখানে অফিস রয়েছে।

মুসলমানদের জন্য এবাদতখানার পাশাপাশি দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারের প্রতিষ্ঠান সারা দেশে একই মডেলের এই মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন একটি সময়োচিত উদ্যোগ। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এখনো এর পুরোপুরি সুফল মিলছে না। সুবিশাল এই মসজিদ কমপ্লেক্সের অনেক কিছুই এখনো অব্যবহৃত পড়ে আছে। মহাসড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনাও সৌন্দর্য ম্লান করে দিচ্ছে। এসবের নিরসণ করে ইসলামের মহান শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি এর মাধ্যমে ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার আরো বিকাশ ঘটবে এমনটিই সবার প্রত্যাশা।

 


আরো সংবাদ



premium cement