২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এক বছরে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১২ হাজার

-


গত এক বছরে (২০২২ সাল) দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১১ হাজার ৮৯০ জন। এর মধ্যে সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৩৪ জন শ্রমিক। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৮৭৫ জন।
দুর্ঘটনা ও শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন সেভ দ্য রোড, যাত্রী কল্যাণ সমিতি এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস গতকাল সোমবার পৃথক সংবাদ সম্মেলন ও প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ২০২২ সালে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৭ হাজার ৬১৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৮৭৫ জন।
সংবাদ সম্মেলনে এক বছরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি জানান, বছরব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ৬ হাজার ৭৪৯টি। এসব দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত এবং ২০১ জন আহত হয়েছেন। আর নৌপথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত এবং ৩১৮ জন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি নিখোঁজ হয়েছেন ৭৪৩ জন।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১৯.৮৯ শতাংশ এবং প্রাণহানি ২৭.৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত আট বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চার গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে গত আট বছরের মধ্যে ২০২২ সালে সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং প্রাণহানিও এ বছর বেশি হয়েছে।


তিনি বলেন, গত বছর ১৫ জুলাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওইদিন ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত এবং ৯৭ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর, ওই দিন ৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২৯ জুলাই। ওই দিন ২৭টি দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত এবং ৮৩ জন আহত হয়েছেন।
তাদের মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাথ না থাকা বা ফুটপাথ বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতা, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা, দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়া ইত্যাদি।


সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক প্রমুখ।
এ দিকে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেভ দ্য রোড জানায়, গত বছর দেশে সড়ক পথে দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ১০৮ জন নিহত হয়েছেন। সংগঠনের মহাসচিব শান্তা ফারজানা দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন।
সংগঠনের চেয়ারম্যান শ্রমিক নেতা জেড এম কামরুল আনামের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাজী সেলিম সরোয়ার, মোমিন মেহেদী, বিকাশ রায়, আইয়ুব রানা প্রমুখ।
অপর দিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস জানায়, ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ৩৪ শ্রমিক এবং ১ হাজার ৩৭ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৩৫ জন নিহত এবং ১৫৫ জন আহত হন। বিভিন্ন সেক্টরে ১৯৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ১১৫টি। বিলসের তথ্যকর্মকর্তা মামুন অর রশিদের পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় যতজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন তা ২০২১ সালের তুলনায় ২ শতাংশ কম। ২০২২ সালে বিভিন্ন সেক্টরে সব মিলিয়ে ১৯৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১৫টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে তৈরী পোশাক খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে বিড়ি শিল্পে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৪টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে পাট শিল্পে। এ ছাড়া পরিবহনে ১১টি, টেক্সটাইল শিল্পে ১০টি, হোটেল রেস্টুরেন্ট খাতে পাঁচটি, রেলওয়েতে চারটি এবং অন্যান্য খাতে ২২টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে।

 


আরো সংবাদ



premium cement