২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

জিও-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিশ্বে এক শ’ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবে

-

বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি এবং আরো কয়েকটি দেশের বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল বাস্তবায়ন করা হলে আগামীতে বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। সৌর রশ্মি ব্যবস্থাপনার (এসআরএম) কারণে এত বিশালসংখ্যক মানুষ আবার ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। ফলে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো এবং কিছু ঝুঁকিপুণ অঞ্চলের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে গবেষক দল তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং বিশাল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে।
জিওইঞ্জিনিয়ারিং হলো এমন এক ধরনের কৌশল যা বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। এটা এক ধরনের প্রযুক্তি যা প্রয়োগে পৃথিবীতে পতিত সূর্যের আলোর তাপমাত্রা কমে যাবে। অর্থাৎ এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে পৃথিবীতে সূর্যের আলো থাকবে কিন্তু তাপমাত্রা এখনকার চেয়ে আরো কমে যাবে। ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর যে ক্ষতির আশঙ্কার কথা বিজ্ঞানীরা বলছেন, তা থেকে পৃথিবীবাসী নিষ্কৃতি পাবে। এ প্রযুক্তিতে ভূপৃষ্ঠের উপরে স্ট্রাট্রোস্ফিয়ারে একধরনের অ্যারোসল (রাসায়নিক পদার্থ) স্প্রে করা হবে। যতক্ষণ স্ট্রাটোস্ফিয়ারে এ অ্যারোসল থাকবে ততক্ষণ সুর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পতিত হলেও পৃথিবীর তাপমাত্রা কম থাকবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং বা সৌর ভূ-প্রকৌশল একটি নতুন ধারণা। গবেষকরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এ নতুন ধরনের গবেষণা নিয়ে কাজ করছেন। এটি যেমন বিপুল সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র তেমনি এর ঝুঁকিও থাকবে। সৌর জিও-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নানা ধারণার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়টি হলো, বাতাসে এমন কিছু কণা ছড়িয়ে দেয়া যা সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলিত করে আবার মহাকাশে পাঠিয়ে দেবে। বিজ্ঞানীরা এ প্রযুক্তিতে সালফারের কণা নিয়ে ভাবছেন। স্ট্রাটোস্ফিয়ারে পর্যাপ্ত সালফার কণা ছড়িয়ে দিতে পারলে তাতে সূর্যের তাপমাত্রা পর্যাপ্ত পরিমাণে বদলে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা যদি ২ ডিগ্রি কমিয়ে আনা যায় তাহলে বায়ুমণ্ডলের রঙই বদলে যাবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের পর এমনটা দেখা যায়। তখন খুবই অদ্ভুত ম্যাজেন্টা বা কমলা রঙের সূর্যাস্ত দেখা যায়। এমনকি আকাশ আরো সাদা হয়ে উঠতে পারে, নীল কমে যেতে পারে। এমন পরিবর্তনগুলো হয়তো তখন চোখে ধরা পড়বে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ কাজটি করলে এর প্রভাব শুধু পৃথিবীবাসী নয়, আরো অনেক জীবের ওপর পড়তে পারে। বিশেষ করে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সাথে জীবনপ্রক্রিয়া জড়িত যেসব পোকা-মাকড় রয়েছে সেসবের ওপর এর প্রভাব বেশি হতে পারে। যেমন ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী অ্যানুফিলিস স্ত্রী মশা এমন এক ধরনের প্রাণী।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সোলার জিও-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাবে। তবে একই সময়ে কোনো কোনো এলাকা আরো অনেক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তারা এ ব্যাপারে বলছেন, এটা তখন বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে এসব গবেষকের কাছে এখনো এসব কিছু চিন্তায় সীমাবদ্ধ। এখনো এসব নিয়ে বাস্তব কোনো কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।
জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং করা হলে পৃথিবীর ১০০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে বলে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে করা এ গবেষণাটি গত ২০ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত হয়েছে।, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সোলার ভূ-প্রকৌশলের কারণে ম্যালেরিয়া ঝুঁকি পুনরায় দেখা দিতে পারে’। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে গবেষণাটি করা হলেও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি’র সহকারী অধ্যাপক ড. কলিন কার্লসন প্রধান গবেষক ছিলেন। গবেষকরা বলছেন, জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, স্ট্রাটোস্ফিয়ারে অ্যারোসল ঢুকিয়ে দিলে হয়তো সাময়িক বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি থামবে কিন্তু এ প্রক্রিয়া জলবায়ু পরিবর্তন কমাতে অবিচার করা হবে। স্বাস্থ্যের উপর যে প্রভাব পড়বে তা সামনে আসছে না।
এ গবেষণায় বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জার্মানির আটজন গবেষক ছিলেন। তারা মাঝারি ও উচ্চ বৈশ্বিক তাপমাত্রায় জলবায়ু পরিবর্তনের মডেল নিয়ে কাজ করেছেন জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং করে অথবা জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া। তাদের গবেষণায় অ্যানোফিলিস মশার ভেক্টরের জন্য কোনো মডেল সহায়ক তা চিহ্নিত করেছেন এবং সেসব এলাকায় মশার কারণে কি পরিমাণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাও দেখেছেন। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, উচ্চ তাপমাত্রার পরিবেশে জিও-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অতিরিক্ত ১০০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement