২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ফলোঅন শঙ্কায় বাংলাদেশ

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ৪৫৩ (১৩৬.২ ওভার); বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৩৯/৫ (৪১ ওভার)
-

বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেন ভুলে গেছেন তারা কোন ফরম্যাটের ক্রিকেট খেলছেন। টেস্ট খেলছেন, নাকি ওয়ানডে বা টি-২০। আত্মবিশ্বাসের ছিটে ফোঁটাও লক্ষ করা যায়নি। পাঁচ সেশন ফিল্ডিং করে প্রতিপক্ষের বিশাল রান যেন এক ইনিংসেই তাড়া করতে চাইছেন। প্রোটিয়া দল তাদের পরিকল্পনা বদল করে আক্রমণ শানিয়েছে পেসারদের দিয়ে। প্রথম টেস্টে স্পিন আক্রমণ দিয়ে কুপোকাত করার পর বাংলাদেশের সব পরিকল্পনা সাজিয়েছিল স্পিন অ্যাটাকের বিপক্ষে। তবে বোলিং কোচ ডোনাল্ড জানিয়েছেন এখানে পেসারদের রাজত্ব হবে। সেভুল ভেঙেছেন তাইজুল ৬ উইকেট নিয়ে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসে ঠিকই শাসন করল পেসাররা। পাঁচ উইকেটের প্রতিটিই তুলে নিলেন তারা। আর তাতে ফলোঅন শঙ্কায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৩৯ রান। ৩১৪ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। মুশফিক ৩০ ও রাব্বি ৮ রানে অপরাজিত আছেন।
নিজেদের প্রথম ইনিংসের প্রথম ওভারেই শূন্য হাতে ফিরলেন মাহমুদুল হাসান জয়। অলিভিয়ের লেন্থ বলে পরাস্ত হন তিনি। পুশ করতে গিয়ে খোঁচা দিয়ে বসেন। প্রথম স্লিপে সহজে ক্যাচ ধরেন এরউই। প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা জয় ২ বল খেলে ফেরেন খালি হাতেই। ক্রিজে তামিম ইকবালের সঙ্গী হলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরু থেকে তামিম দারুণ সব শটে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চাপ কমানোর চেষ্টা করেন। অন্য শান্তও দারুণভাবে সঙ্গ দেন তামিমকে। দু’জনের যুগলবন্দী লড়াইয়ে বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৩ ওভারে দলীয় পঞ্চাশ পূর্ণ হয়। একুশতম ওভারের পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তামিম ইকবাল। রিভিউ নেবেন কী না এ বিষয়ে শান্তর সাথে একটু কথা বলেছেন, এরপর নিজেই হাঁটা দেন ড্রেসিংরুমের দিকে। ৫৭ বলে ৪৭ রান করেন ৮ চারের মারে। তার আউটে ভেঙে যায় ৭৯ রানের জুটি।
তামিমকে ফেরানোর পর শান্তকেও ফেরালেন মুল্ডার। তার আউটসাইড অফের বল লাগে শান্তর পায়ে। ফ্লিক করতে গিয়ে বল মিস করেন। আম্পায়ার প্রথমে আউট দেননি। রিভিউ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বল স্ট্যাম্পে যাওয়াতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হন আম্পায়ার। ৬ চারে ৭৪ বলে ৩৩ রান করে ফিরেন শান্ত।
ক্রিজে নতুন দুই ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক-মুশফিকুর রহিম। ডারবান টেস্টে ব্যর্থ এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ। এবার মুল্ডারের শিকার মুমিনুল হক। বিপদে হাল ধরতে পারলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। লাইনের বাইরে খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন মুমিনুল। মুল্ডারের বল লাগে পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেয়ার চেষ্টা করেননি। ১ চারে ২৪ বলে ৬ রান করে ফিরেন ব্যাট হাতে ব্যর্থ এই অধিনায়ক। আবারো ব্যর্থ মুমিনুল হক। ফর্মহীনতা তার কাটছেই না। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুর্দশা চলছেই! আগের টেস্টের দুই ইনিংসে ০ ও ২ রান করেছেন বাঁহাতি ব্যাটার। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের তিন ইনিংসের একটিতেও যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে। দলের রান তখন ৪ উইকেটে ১০০। ৪ উইকেটের মধ্যে ৩টিই নিয়েছেন মুল্ডার।
৩২.৬ ওভারে ফিরলেন লিটন দাসও। কেউ যেন ক্রিজে থিতু হতে চাইছেন না কিংবা পারছেন না। ৫ ওভারই টিকলেন তিনি। অলিভারের বলে দলীয় ১২২ রানে আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে দুই চারে করলেন ১১ রান। মুশফিকের সাথে হাল ধরলেন ইয়াসির আলি রাব্বি।
এর আগে ৩০০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের দৃঢ়তায় আরো দেড়শো রান যোগ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশকে লম্বা সময় হতাশায় ভুগিয়ে অবশেষে থেমেছে স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে ১৩৬.২ ওভার ব্যাট করে ডিন এলগারের দল অলআউট হয়েছে ৪৫৩ রানে। প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটের ছয়টিই নিয়েছেন এই টেস্টে একাদশে আসা তাইজুল ইসলাম। সর্বোচ্চ ৫০ ওভার বল করে ১৩৬ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন তিনি। খালেদের ৩টি এবং মিরাজের একটি।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অবদান বেশ কয়েকজনের। তাদের এগারো ব্যাটসম্যানের দশজনই পেরিয়েছেন দুই অঙ্ক। সর্বোচ্চ ৮৪ এসেছে আটে নামা কেশব মহারাজের ব্যাট থেকে। ৭ উইকেটে ৩৮৪ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতি থেকে ফেরার পর মহারাজের ব্যাটে এগোতে থাকে প্রোটিয়ারা। আগ্রাসী ব্যাট করে ক্রমে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে দূরে সরাতে থাকেন তিনি। আগের দিন দুর্দান্ত বল করে ৩ উইকেট নেয়া তাইজুল ইসলাম এ দিন শুরুতে ছিলেন সাদামাটা। বেশ কিছু আলগা বলে রান বিলিয়েছেন। তবে নিজেকে সামলে লাঞ্চের ঠিক আগে ভিয়ান মুল্ডারকে ফিরিয়ে চতুর্থ উইকেট শিকার করেন তিনি। মহারাজ যখন ছুটছিলেন তিন অঙ্কের দিকে তখন আবার তার আঘাত। তাইজুলের বলে সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন ৮৪ রান করা মহারাজ। ওয়ানডে মেজাজে এই রান এসেছে ৯৫ বলে। ৯ চারের সাথে তিনি মেরেছেন ৩ ছক্কা। মহারাজের বিদায়ে ৪১৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। সে সাথে পঞ্চম উইকেটের মাইলফলক পূর্ণ হয় তাইজুলের। টেস্ট ক্রিকেটে এ নিয়ে ১০মবার পঞ্চম উইকেটের দেখা পেলেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার।
দলের ৪১৮ রানে মহারাজের বিদায়ের পর লিজার্ড উইলিয়ামসকে নিয়ে আরো ৩৫ রান যোগ করেন সাইমন হারমার। এই জুটিও ভেঙেছেন তাইজুল। ৫৯ বলে ২৯ করা হারমার তাইজুলের বলে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে হয়েছেন স্টাম্পিং। তাইজুলের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন সিমন। অবশ্য অবদান কম নয় লিটন দাসের। দ্রুত স্ট্যাম্পিং করেছেন তিনি। তাতে তাইজুলের ষষ্ঠ উইকেট প্রাপ্তি। এর মাধ্যমে তিনি টেস্ট ক্রিকেটে দেড় শ’ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। পরের ওভারেই মেহেদী হাসান মিরাজ মুড়ে দেন ইনিংস।
স্কোর কার্ড (টস-দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ১৩৬.২ ওভারে ৪৫৩ (এলগার ৭০, এরইউ ২৪, পিটারসেন ৬৪, বাভুমা ৬৭, রিকেলটন ৪২, ভেরিয়েন্নে ২২, মুল্ডার ৩৩, মহারাজ ৮৪, হারমার ২৯, খালেদ ৩/১০০, তাইজুল ৬/১৩৫, মিরাজ ১/৮৫)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : তামিম ৪৭, মাহমুদুল ০, নাজমুল ৩৩, মুুমিনুল ৬, মুশফিক ৩০*, রাব্বি ৮*, মুল্ডার ৩/১৫, অলিভার ২/১৭)।


আরো সংবাদ



premium cement