রূপগঞ্জে স্কুলছাত্রী ধর্ষণকারী ছাত্রলীগ নেতা ও সহযোগীরা ২ গার্মেন্ট শ্রমিককেও ধর্ষণ করেছিল
- রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা
- ১৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করার ঘটনার আগে আরো দুই গার্মেন্ট শ্রমিক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর ওই ধর্ষণ মামলার আসামিরাও হলো বহিষ্কৃত তারাব পৌরসভা ছাত্রলীগ সহসভাপতি আবু সুফিয়ান সিন্ডিকেটের সদস্য। ছাত্রলীগের এ সিন্ডিকেটটি এখন এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক।
থানা সূত্র জানায়, গত ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে রূপসী নিউ মডেল স্কুল মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়। ওই মেলায় বেড়াতে এসে বরপা বাগান বাড়ির বাসায় ফেরার পথে মৈকুলী এলাকার অ্যারেস্টা ফ্যাশন কেয়ার গার্মেন্টের দুই শ্রমিককে উঠিয়ে নিয়ে যায় উপজেলার রূপসী প্রধানবাড়ী এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে আকাশ (১৯), ইমান আলীর ছেলে ইসমাইল প্রধান (২৩), জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার টুপকারচর এলাকার ওয়াজেদ আলীর ছেলে আনিছুর রহমান (২৫) ও লাইছউদ্দিনের ছেলে হাবুসহ (২৭) বেশ কয়েকজন। এরা সবাই বহিষ্কৃত তারাব পৌরসভা ছাত্রলীগ সহসভাপতি আবু সুফিয়ান সিন্ডিকেটের সদস্য বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। পরে রূপসী প্রধানবাড়ি বালুর মাঠে নিয়ে ওই দুই গার্মেন্ট কর্মীর মধ্যে একজনকে গণধর্ষণ করে এবং আরেকজন দৌড়ে মসজিদের ছাদে আশ্রয় নেন। এ ঘটনায় ধর্ষিতা বাদি হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনার সাথে জড়িত আকাশ, ইসমাইল প্রধান ও আনিছুর রহমানকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠালেও অভিযুক্ত হাবুসহ অন্যরা এখনো পলাতক।
এ ঘটনার পর গত ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার আবু সুফিয়ান, তৌসিফ, আফজাল ও তানভীরসহ বেশ কয়েকজন গন্ধর্বপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীতে পড়–য়া ছাত্রীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দুই দিন আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি গত আবু সুফিয়ানসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে তৌফিক ও আফজাল নামের দুইজন ওই দিনই নারায়ণগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় এবং আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ধর্ষণের ঘটনায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ফুসে উঠেছে। বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। প্রতিবাদীরা ধর্ষকদের উপযুক্ত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
এ দিকে ছাত্রলীগের এ ধরনের কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি ফয়সাল আলম শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ মাসুম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত তারাব পৌরসভা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সুফিয়ানকে বহিষ্কার করা হয়।
দু’টি ঘটনাই এজাহার নামীয় আসামির বাইরে যারা রয়েছেন তাদের বাঁচাতে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল উঠে পড়ে লেগেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগÑ তারাব পৌরসভা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সুফিয়ান সিন্ডিকেট ফেনসিডিল, ইয়াবা, মদ, বিয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। এ ছাড়া ছিনতাই-ডাকাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে তারা। আর এদের শেল্টার দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা। আর ওই নেতারাই এখন এজাহার নামীয় আসামির বাইরে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সিন্ডিকেটটি রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকার মাদকের আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনার সাথে জড়িত বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা