২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ শাবান ১৪৪৬
`
শাহবাগে সমাবেশে ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি

হাসিনার আমলের সব গুম খুনের বিচার করতে হবে

-


গণহত্যা ও মানবতাবিরাধী অপরাধের বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা, পলাতক হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেশে যত গুম, খুনসহ নৃশংসতা হয়েছে তার বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঝে এখনো যারা ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি সেক্টরে সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিজের উদ্যোগে ও ‘গণহত্যার ন্যায়বিচার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা আন্দোলন’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডব, ২০০৯ সালের পিলখানার নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড, ২০১০ সাল তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের নামে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা চালানোসহ আয়নাঘরে গুম, ক্রসফায়ার সব হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা এত নিষ্ঠুর ও ফ্যাসিস্ট যে তার ক্ষেত্রে শুধু ফ্যাসিস্ট শব্দটি প্রযোজ্য নয়। তাকে আমি স্যাডিস্ট বলি। স্যাডিস্ট ইংরেজিতে তাকে বলা হয় যে খুন, গুম, নিষ্ঠুরতা ও রক্তপাত দেখে একটুও কাঁপেনা বরং উপভোগ করে। তিনি বলেন, আজকে বিভিন্ন মহল থেকে হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য তাকে আবার রাজনীতে এনে নিজের পদপদবিকে রক্ষা করার জন্য অথবা তার আমলে সুবিধা ভোগ করে পিলখানার মতো নৃশংসতাকে আড়াল করার জন্য যারা ভাবছেন তাদের ধিক্কার জানাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাড়ে ছয়মাস পার করছেন, আমরা জনি খুনি সরকারের কাছে কোনোদিন ন্যায়বিচার পেতাম না। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে আমরা অবশ্যই তার কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। ফলে বিলম্ব হলেও আজকে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে বিডিআর, পিলখানা ও সেনা হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রেতাত্মাদের কী ভূমিকা ছিল আধিপত্ববাদী বিদেশী শক্তির কী ভূমিকা ছিল এসব তদন্ত করে জাতির কাছে এই কমিশনকে সেই তথ্য দিতে হবে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পেছনে আধিপত্ববাদী শক্তির কী ভূমিকা ছিল তা প্রকাশ করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমিও একজন ভুক্তভোগী, আমিও শেখ হাসিনার নিষ্পেশনের শিকার, আমাকেও রাজপথে গুলি করা হয়েছে। সামনে থেকে গুলি ঢুকে পেছন থেকে বের হয়ে গেছে। আমি তিনবার গুমের শিকার হয়েছি। অথচ অনেক মা এখনো তার সন্তানের খোঁজ পাননি।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী বলেন, পিলখানার ঘটনা সম্পর্কে শেখ হাসিনার আগে থেকেই জানা ছিল। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলায়, ভারতের বিরোধিতা করায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিজের প্রধান নির্বাহী ব্রি. জে. (অব:) মোহাম্মদ হাসান নাসির বলেন, আমরা ২০০৬ সাল থেকে গুম, খুন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার যারা আমরা সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার চাইতে এখানে সমবেত হয়েছি। তিনি বলেন, নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিজ এটি একটি নির্দলীয় প্রতিষ্ঠান। নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা আমাদের সাথে আছেন। গত ১৬ বছর ধরে গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যরা একত্র হলে অবশ্যই এর বিচার হবে।
সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, আমজনতার দলের সদস্যসচিব তারেক রহমান, শহীদ মেজর তানভীরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা, মেজর রেজাউল করিম (বরখাস্ত), মেজর ফিরোজ ইফতেখার ফুয়াদ, লে. ক. হাসিনুর রহমান (বীর প্রতীক), কর্নেল মো: শাহ নুর রহমান, হেফাজতে ইসলামের যুগ্মসচিব মুফতি মনির হোসাইন, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মুসা ইজহার, দফতর সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমদ মাবরুর, মায়ের ডাকের সানজিদা ইসলাম তুলি, কূটনীতিক ক্যাপ্টেন মারুফ জামান, গুম ফেরত বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement