হাসিনাকে প্রত্যর্পণ অবিশ্বাস্যভাবে জটিল করে তুলবে ভারত
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:১৫
ভারতীয় একজন আইন বিশেষজ্ঞ প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের পথটি হবে খুবই জটিল। দ্যা ডিপ্লোম্যাট বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদনের শিরোনামে প্রশ্ন তুলেছে ভারত কি হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে রাজি হবে? যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নিশ্চিত করেছেন যে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধের জন্য বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে সব প্রয়োজনীয় নথি ভারতে পাঠিয়েছে এবং প্রয়োজনে একটি স্মারক জারি করতেও প্রস্তুত রয়েছে।
তবে ডিসেম্বরের শেষ দিকে পাঠানো প্রত্যর্পণের অনুরোধ- ভারতের কোনো সাড়া পায়নি। ভারত কোনো উত্তর দেয়নি। নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সংযত অবস্থান বজায় রেখেছে এবং বারবার জিজ্ঞাসাবাদ সত্ত্বেও প্রাপ্তির প্রাথমিক স্বীকৃতি ছাড়া আর কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছে।
২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ আইনত হাসিনাকে ফেরত পাওয়ার অধিকারী; যা ২০১৬ সালে প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার জন্য সংশোধন করা হয়েছিল। তবে এর ভূরাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব জটিল রয়ে গেছে।
ভারত যদি হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করতে সম্মত হয়, তবে ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির চিঠি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির কঠোর বাস্তবতাসাপেক্ষে প্রক্রিয়াটি একাধিক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে।
পাঞ্জাবের রাজীব গান্ধী জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও আইনবিদ ড. সঙ্গীতা তাক বলেন, ‘যদিও প্রযুক্তিগত দিকগুলো মূলত প্রত্যর্পণ চুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং মানবাধিকার বিবেচনা এটিকে একটি অবিশ্বাস্যভাবে জটিল ও সংবেদনশীল বিষয় করে তুলবে। ড. সঙ্গীতা বলেন, বাংলাদেশ ভারতে আনুষ্ঠানিক প্রত্যর্পণের অনুরোধ জমা দেয়ার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। এই অনুরোধে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ থাকতে হবে এবং বিচারিক আদেশ, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও অন্যান্য প্রমাণপত্রসহ সহায়ক নথির একটি শক্তিশালী সংগ্রহ দ্বারা সমর্থন করা উচিত। তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন, অনুরোধে অবশ্যই [নিশ্চিতকরণ] অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে যে, বিচার বাংলাদেশে ন্যায্য হবে এবং পক্ষপাতদুষ্ট হবে না।’
অন্য কথায়, অপরাধের তালিকাভুক্তির পাশাপাশি অনুরোধে এই নিশ্চয়তা প্রদান করা উচিত যে হাসিনার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হবে না- একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যা ভারতকে প্রত্যর্পণের কথা বিবেচনা করার আগে যাচাই করতে হবে। উল্লেখযোগ্যভাবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছে। কিন্তু এরপর কী হবে?
আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জমা দেয়ার পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মূলত বিদেশ মন্ত্রণালয় (এমইএ) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমএইচএ)- সব চুক্তির বাধ্যবাধকতা পূরণ করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা শুরু করার কথা। ড. সঙ্গীতা বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘যেহেতু ভারতের সাথে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তাই ভারত সরকার সেই চুক্তিটি যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কি না, তা পর্যালোচনা করবে এবং নিশ্চিত করবে।’
এই পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো উভয় দেশেই ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে আইনত স্বীকৃত কি না তা নির্ধারণ করতে হবে; যা দ্বৈত অপরাধ হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এ-ও পরীক্ষা করতে হবে যেকোনো অভিযোগ রাজনৈতিক, সামরিক বা ধর্মীয় অপরাধের জন্য ছাড়ের মধ্যে পড়ে কি না- এমন একটি সিদ্ধান্ত যা শেষ পর্যন্ত প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের কারণ হতে পারে।
প্রাথমিক প্রশাসনিক পর্যালোচনা অনুকূল হলেও বিষয়টি এখানেই শেষ হবে না। প্রত্যর্পণের অনুরোধ পরবর্তীতে ভারতে বিচারিক পর্যালোচনার বিষয় হবে, যেখানে বিশেষায়িত প্রত্যর্পণ আদালতগুলো এর বৈধতা ও যোগ্যতা যাচাই করবে। ড. সঙ্গীতা আরো বলেন, ভারত প্রত্যর্পণের বিচারিক পর্যালোচনাও করবে, ভারতে প্রত্যর্পণের জন্য তৈরি বিশেষ আদালত প্রত্যর্পণের অনুরোধের বৈধতা ও যোগ্যতা পরীক্ষা করবে। যদি আদালত দেখতে পায় যে রাজনৈতিক মামলার একটি বিশ্বাসযোগ্য হুমকি রয়েছে, তাহলে এটি প্রত্যর্পণকে আটকাতে পারে।