২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`

২৭ বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ১১৩৭ জনকে নিয়োগ দিতে নির্দেশ

-

২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত এক হাজার ১৩৭ জনকে তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ দিতে হাইকোর্টের দেয়া রায় পুনর্বহাল করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ নিয়োগবঞ্চিত এক হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে করা পৃথক আপিল সর্বসম্মতিতে মঞ্জুর করে এ রায় দিয়েছেন। এই রায়ের ফলে ১৬ বছর পর চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পেলেন ২৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ এক হাজার ১৩৭ জন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রায় ঘোষণার সময় নিয়োগবঞ্চিত শতাধিক প্রার্থী আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের পর আবেদনকারীদের আইনজীবী সালাহউদ্দিন দোলন বলেন, আপিল বিভাগের আগের রায় বাতিল করা হয়েছে। এখন তারা ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাসহ নিয়োগ পাবেন। তাদেরকে ৯০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে হবে। তিনি বলেন, এ রায়ের ফলে বিচার বিভাগের যে দায় ছিল, সেই দায় থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে। হাইকোর্টের তিনটি নির্দেশনা দিয়ে যে রায় দেয়া হয়েছিল, তা বহাল করা হয়েছে। ওই নির্দেশনায় দ্বিতীয় ভাইভার মাধ্যমে যাদের বাদ দেয়া হয়েছিল, তাদের চাকরি দিতে হবে।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, তৎকালীন বিএনপির আমলে যোগ্যভাবে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে বাদ দিয়েছে। আমি মনে করি দীর্ঘদিন পর্যন্ত তারা আদালতের বারান্দায় ঘুরেছে। যেভাবে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছে, আজকের রায়ের মাধ্যমে সেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো। তিনি আরো বলেন, আপিল বিভাগ আজকে পূর্বের আপিল বিভাগের দেয়া রায় বাতিলপূর্বক এবং হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে যে রায়ে এক হাজার ১৩৭ জনের চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা ছিল সেটি পুনঃউজ্জীবিত হলো।
এ মামলার অপর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কখনো ব্যর্থ হয় না। আমি আহ্বান জানাবো যারা নতুন করে চাকরি পাবে তারা যেন দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করে। বাংলাদেশের এই শূন্য জায়গায় ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ন্যায়নিষ্ঠার সাথে নতুন বাংলাদেশের গঠনের ক্ষেত্রে তারা যেন ভূমিকা রাখেন। এই আহ্বান সবার প্রতি।

২৭তম বিসিএসে প্রথমবারের মৌখিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে ২০১০ সালে রায় দেন আপিল বিভাগ। পরে ওই রায় রিভিউ চেয়ে এক হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে ১৪০ জন গত বছর পৃথক তিনটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর আপিল করা হয়। গত বুধবার ২৭তম বিসিএসে নিয়োগঞ্চিত এক হাজার ১৩৭ জনের আপিলের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায়ের জন্য দিন ধার্য রাখেন আপিল বিভাগ।
এ বিষয়ে আইনজীবী সালাহউদ্দিন দোলন বলেন, ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২৭তম বিসিএসে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যখন এই এক হাজার ২০০ জন চূড়ান্ত সুপারিশের পর চাকরিতে ঢুকবে, তখন ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে সেকেন্ড মৌখিক পরীক্ষার বিরুদ্ধে মামলা হয়। হাইকোর্ট বিভাগে আবেদনকারীরা জিতেছিলেন। কিন্তু আপিল বিভাগ সিপিতে (লিভ টু আপিল) বলেছিল দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা কারেক্ট ছিল। আপিল বিভাগের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদনকারীরা রিভিউ করলেন। ৭ নভেম্বর সেই রিভিউ মঞ্জুর করে আপিলের জন্য অনুমতি দেয়া হয়।

২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় তিন হাজার ৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ওই বছরের ৩০ মে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ওই বছরের ১ জুলাই প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিল করে এবং দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীক্ষার্থীরা।
২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। তার আগে ওই বছরের ২৯ জুলাই দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় তিন হাজার ২২৯ জন উত্তীর্ণ হন। পরে তাদের চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়।
এ দিকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে সরকার পক্ষ। ২০১০ সালের ১১ জুলাই সেই লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ। এই রায়ে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা নেয়া সঠিক বলা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement