২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`
বিডিআর হত্যাকাণ্ড

হাসিনা মইন ইউসহ পলাতকদের সাথে কথা বলতে দূতাবাসগুলোতে চিঠি

-


বিডিআর বিদ্রোহের তথ্যগত সহায়তার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনা ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত জাতীয় তদন্ত কমিশন। একই সাথে দেশে-বিদেশে পালিয়ে থাকাদের চিহ্নিত করে তাদের বক্তব্য সংগ্রহ করার কাজ চলছে। এ জন্য বিদেশী দূতাবাসগুলোর সাথে যোগাযোগের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে কমিশন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা তদন্ত কমিশন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব:) আ ল ম ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা এখন কে, কোথায় পালিয়ে অবস্থান করছেন তা জানতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা বিদেশী দূতাবাসগুলোর কাছ থেকে অনেক ধরনের সহযোগিতা চাই। আমরা সব ধরনের তথ্য চাই। উদাহরণ দিয়ে কমিশন সভাপতি বলেন, যেমন জেনারেল মইন ঘটনার সময় চিফ অব আর্মি (সেনাপ্রধান) ছিলেন। তাকে আমাদের খুব দরকার, তার স্টেটমেন্ট আমাদের খুব প্রয়োজন। কারণ কেন অপারেশনটা সেখানে ফেল করল, কেন এত মানুষ, সেনা অফিসারকে হত্যা করা হলো? সেটা জানতে হবে। একইভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যও প্রয়োজন। কিন্তু তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। আমাদের কাছে অন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নেই, এই লোকগুলোকে কানেক্ট করাই চ্যালেঞ্জ।

তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সেনাসদস্যসহ ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে তদন্ত কমিশন। বিভিন্ন ব্যক্তির বিদেশ গমনে তদন্ত কমিটির নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনার তদন্তে আমরা যাদের যাদের প্রয়োজন মনে করছি তাদেরকে বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। কারণ যেকোনো সময় যে কাউকে জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন হতে পারে। জিজ্ঞাসা করার সময় যেন আমরা তাদেরকে সহজেই পাই। তবে তাদের সংখ্যা আমরা এই মুহূর্তে বলছি না। তারা রাজনৈতিক নাকি প্রশাসনিক লোক তাও স্পষ্ট করেননি তিনি।

কোনো ব্যক্তি যদি বিদেশে লুকিয়ে থাকেন, তার অবস্থান লোকেট (চিহ্নিত) করে তার সাথে যোগাযোগ করা তো কঠিন বিষয়। এই বিষয়গুলো সময়সাপেক্ষ। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে। তার মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা) ও সচিব আনিসুজ্জামানের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আমরা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। আনিসুজ্জামানের তদন্ত রিপোর্ট পাইনি, তবে সামারি পেয়েছি।
আমরা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করব না। তবে যারা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তারা চাইলে আমাদের তথ্য দিতে পারেন, অথবা ওয়েবসাইটেও জানাতে পারেন। আমাদের পরিকল্পনা আছে আরো অনেকের সাথে কথা বলার।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে দু’টি বাধা তো আছেই। একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়, আরেকটি বিদেশে পালিয়ে যাওয়াদের কানেক্ট করা, জিজ্ঞাসাবাদ করা। অভ্যন্তরীণটা হয়তো সহজেই সম্ভব, কিন্তু বিদেশে পালানোদের কানেক্ট করা তো কঠিন। সেজন্য হয়তো বাড়তি সময় লাগতে পারে।

বিডিআর বিদ্রোহে বিদেশী কোনো সংস্থার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যোগসূত্র রয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের বলা হয়েছে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র যদি থাকে তা বের করার জন্য। আমরা তদন্ত করছি, যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় কেউ জড়িত আছে সেটা অবশ্যই আপনারা জানতে পারবেন। তথ্য দিতে সবাইকে আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি কমিশনের পক্ষ থেকে। আমরা অনুরোধ করছি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। আমরা যে ওয়েবসাইট (যঃঃঢ়ং://িি.িনফৎ-পড়সসরংংরড়হ.ড়ৎম) খুলেছি সেখানে ভালো সাড়া পাচ্ছি।
পিলখানার ভেতরে অনেক সেনা অফিসার ও তাদের পরিবার জিম্মি ছিলেন। অনেকে হতাহতের শিকার হয়েছেন। আবার অনেকে ফিরে এসেছেন। জীবিত ফিরে আসাদের অভিজ্ঞতা আপনারা শুনেছেন কি না- জানতে চাইলে আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, আমরা তিনজন শহীদ সেনা অফিসারের পরিবারের বক্তব্য শুনেছি। এর মধ্যে শহীদ মেজর জেনারেল শাকিলের ছেলে বক্তব্য দিয়ে গেছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement