২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ শাবান ১৪৪৬
`

শাহবাগে জুলাইয়ের নারী সমাবেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি

হাসিনা রেজিমের অন্যতম ভুক্তভোগী ছিল নারীরা : সামান্তা শারমিন
-

জুলাই আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর দায়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করেছেন অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া নারীরা। এ সময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।
গতকাল বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘জুলাইয়ের নারীরা’ ব্যানারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে বেলা ২টা থেকেই জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও শহীদ পরিবারের নারী সদস্যরা শাহবাগে উপস্থিত হন।
আয়োজকরা জানান, জুলাইয়ের আন্দোলনে নারীরা অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের তালা ভেঙে রাজপথে নেমেছে। আমাদের ভাইদের যখন ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, নারীরাই প্রিজন ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়েছে। এই আন্দোলনসহ অতীতের সব আন্দোলনে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে। তার পরও নারীরা অবহেলার শিকার, লাঞ্ছনার শিকার। মনে রাখতে হবে এসব নারীর মধ্যে থেকে রাজনীতিতে আসবে, দেশের ইতিহাস গড়বে। তাই যেকোনো আন্দোলনে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে।
আওয়ামী লীগকে ও হাসিনার বিচারের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, গত ১৫ শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিলে। শেখ হাসিনা ও তার দোসররা মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ যারা করেছিল তাদেরও গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছিল। দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়ে এ দেশের ছাত্র-জনতা জীবনের বাজি রেখে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিল। অবশেষে জনরোষের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী। অসংখ্য জীবনের বিনিময়ে নতুন করে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। আর সেই দেশে কোনো ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের কিছুতেই পুনর্বাসন হতে দেয়া হবে না। জুলাই আন্দোলনে যেসব নারীরা শহীদ হয়েছে, তাদের হত্যাকারী হিসেবে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে অবশ্যই বিচার আওতায় আনতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবসসুম বলেন, জুলাই আন্দোলনে আমরা নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখেছি। কিন্তু জুলাই-পরবর্তী সময়ে বারবার আমাকে শুনতে হয়েছে জুলাইয়ের নারীরা কোথায় হারিয়ে গেল। এখনো সমাজে নারীদের ছবি, শরীর নিয়ে বুলিং করা হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে কঠিন করেছে শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ১৬ বছরে যে গুম, খুন, ‘আয়নাঘরের’ রাজনীতি কায়েম করেছিল তাতে বাংলাদেশের মানুষ নারী নেতৃত্বে বিশ্বাস করতে সময় নেবে। শেখ হাসিনার এই পাপের ফল আমাদের সবাইকে ভুগতে হচ্ছে। এ জন্য আবার যদি নারীদেরকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে হয়, সবার আগে প্রয়োজন শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জানান, গত ১৫ বছর হাসিনা রেজিমের বড় ভুক্তভোগী ছিল এ দেশের নারীরা। এই যে এত মানুষের গুম খুনের ঘটনা ঘটেছে সেটির ভুক্তভোগী হয়েছে ওই পরিবারের সদস্যরা। তৎকালীন স্বৈরাচারের ভয়ে কেউ তখন কিছু বলেনি। সর্বশেষ জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা চালিয়েছে। তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রযন্ত্র, দলীয় ক্যাডার ও গুণ্ডা বাহিনী ব্যবহার করে দেশব্যাপী গণহত্যা চালানো হয়। এই গণহত্যার দায়-দায়িত্ব শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বলতে চাই, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার সহযোগীদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত বিচার করা হোক। বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসাইন বলেন, ২৪-এর অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের সর্বস্তরের সব শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি আমরা দেখেছি, মায়েরা খাবার রান্না করে খাইয়েছেন, আঁচল দিয়ে আহতদের কপাল বেঁধে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, জুলাইয়ে বাংলাদেশে যারা বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদেরকে যদি বিচারের আওতায় আনা না যায়, তা হলে এ দেশের কোনো মানুষেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সুতরাং বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির নারী সেল সম্পাদক সাদিয়া ফারজানা দিনার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য সিনথিয়া জাহান আয়েশা, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement