বৃহস্পতিবার এলেই বাড়ে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রুটের বাসভাড়া
- আরফাত বিপ্লব চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এই রুটের বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছুটির পর গ্রামমুখী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। এ ছাড়া রোববার সরকারি অফিস খোলার দিন সকালে চট্টগ্রাম শহরমুখী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের কোনো রুটেই শৃঙ্খলা নেই। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, বান্দরবান ও বাঁশখালী রুটে চলছে পরিবহন নৈরাজ্য। অবৈধ যানবাহন, ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। বিশেষ করে প্রতি বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া আদায় করে। এর প্রতিবাদ করলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাতে নাজেহাল হতে হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের লোহাগাড়ার চুনতি, আমিরাবাদ, পদুয়া, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, চন্দনাইশের দোহাজারী এবং পটিয়া ও বাঁশখালীর যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। চট্টগ্রাম নগরী থেকে লোহাগাড়ার আমিরাবাদের বাস ভাড়া ১০০-১১০ টাকা হলেও এ দিন ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। বড় আকারের মাইক্রোবাসের ভাড়া ১২০ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকার বেশি নেয়া হয়। শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বরে শত শত যাত্রীকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকে বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে অটোরিকশা ও অন্যান্য গাড়িতে করে গ্রামে যান।
চট্টগ্রাম থেকে পটিয়া ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়াগামী যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পটিয়া উপজেলা থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত নির্ধারিত বাস ভাড়া ৩৫ টাকা হলেও ৯০-১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। শাহ আমানত সেতু থেকে পটিয়া পর্যন্ত কয়েকটি বিআরটিসি বাস চলাচল করলেও ভাড়া কমছে না। শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বরে বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির পর যাত্রীদের বাসে ওঠার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বাস সঙ্কটকে পুঁজি করে পরিবহন শ্রমিকরা গলাকাটা ভাড়া আদায় করে।
সাতকানিয়ার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের রুটগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী হয়রানি চললেও কোনো প্রতিকার নেই। যাত্রীরা নীরবে সব সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছেন।’ উত্তর সাতকানিয়া বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম রাহী নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বাস ভাড়া নিয়ে সাধারণ যাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। সরকার পরিবর্তন হলেও বন্ধ হয় না হয়রানি। যেন এক অদৃশ্য শক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে নতুন ব্রিজ বাস স্টেশন।’
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে শাহ আমিন পরিবহনের পরিচালক মো: আজিজ জানান, পরিবহন শ্রমিকদের ১০০ থেকে ১৩০ টাকা ভাড়া আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে বেশি ভাড়া আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লোহাগাড়ার বাসিন্দা ও এই সড়কের নিয়মিত যাত্রী ওমর ফারুক জাবেদ বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের পরিবহন ব্যবস্থায় নৈরাজ্য ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে বাসের হেলপারের অনেকবার ঝগড়াঝাটিও হয়েছে।
বাঁশখালীর বাসিন্দা ও প্রিমিয়ার ব্যাংক বহদ্দারহাট শাখার কর্মকর্তা আবু ওবায়দা আরাফাত বলেন, আামরা যারা শহরে চাকরি করি সপ্তাহান্তে আমাদেরকে গ্রামে ফিরতে হয়। কিন্তু নতুন ব্রিজ এলেই মনে হয় জাহান্নামে এসেছি। এত হয়রানি বাংলাদেশের অন্য কোনো বাস স্টেশনে আছে কি না তা আমার জানা নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এই সড়কের অব্যবস্থাপনা নিয়ে একটা দফারফা করা দরকার বলে মনে করি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা