বাংলাদেশে আদানিকে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহের আহ্বান
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:২০
ব্রুনাইয়ের মতো রফতানিকারক দেশগুলোর সাথে দীর্ঘমেয়াদি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস চুক্তি চায় বাংলাদেশ। গতকাল মঙ্গলবার ভারতে জ্বালানি সপ্তাহ সম্মেলনে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, সরকার স্পট এলএনজি কেনার জন্য দেশগুলোর একটি তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করেছে, দু’টি এলএনজি আমদানি সুবিধা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।ভারতীয় মিডিয়ায় এ খবরে বলা হয়, জ্বালানি উপদেষ্টা জানান, দু’টি টার্মিনালের একটি হবে স্থলভিত্তিক টার্মিনাল যার দৈনিক ধারণক্ষমতা ১,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং অন্যটি হবে ভাসমান, স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট যার ধারণক্ষমতা ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
খান আরো বলেন যে, বাংলাদেশ গত সরকারের সমস্ত বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা এবং গ্যাস ব্লক নিলামে তোলার চেষ্টা করছে এবং শিগগিরই একটি টেন্ডার আহ্বান করা হবে। আমাদের সমুদ্র উপকূলে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস মজুদ রয়েছে।
এ দিকে পূর্ণ সক্ষমতায় আদানিকে বিদ্যুৎ সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) প্রতি মাসে আদানিকে ৮৫ মিলিয়ন ডলার করে দিচ্ছে এবং এখন কোম্পানিটিকে দুই ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ পুনরায় সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে।
তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আদানি বাংলাদেশে কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। শীতের মৌসুমে কম চাহিদা ও অর্থ পরিশোধসংক্রান্ত বিরোধের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসে।
বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট থাকার কারণে বাংলাদেশের বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় আদানি গ্রুপ ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এর ফলে ১ নভেম্বর একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মাত্র ৪২% সক্ষমতায় পরিচালিত হতে থাকে। পরবর্তীতে বাংলাদেশও আদানিকে অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বলেছিল। বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো: রেজাউল করিম রয়টার্সকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক চাহিদা অনুসারে তারা দ্বিতীয় ইউনিট চালুর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু অনেক বেশি কম্পনের কারণে তা সম্ভব হয়নি।’ তিনি জানান, গত সোমবার ইউনিটটি পুনরায় চালু করতে গিয়ে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমরা প্রতি মাসে ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছি। আরো বেশি পরিশোধের চেষ্টা চলছে এবং বকেয়া কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এখন আদানির সাথে কোনো বড় সমস্যা নেই।
এ বিষয়ে আদানির একজন মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি। গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানায়, বিপিডিবির কাছে কোম্পানির পাওনা প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার। তবে রেজাউল করিম সে সময় দাবি করেছিলেন, বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার।
বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণ নিয়ে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হলো ২০১৭ সালের চুক্তি, যেখানে দু’টি সূচকের গড়ের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি থেকে নেয়া বিদ্যুতের মূল্য ভারত থেকে সরবরাহকৃত অন্য কেন্দ্রের বিদ্যুতের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের আদালত আদানির সাথে করা চুক্তি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর জন্য একটি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পর্যালোচনার ফলাফল চলতি মাসেই প্রকাশ পেতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করে চুক্তি পুনঃআলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। গত বছর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদানিকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ করেছিল। অভিযোগটি ছিল যে, ঝাড়খণ্ড প্ল্যান্ট ভারতীয় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর সুবিধা বাংলাদেশকে না দেয়ায় চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। এ দিকে, দুইপক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য নিরসন হয়েছে কি না, সে-বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি বিপিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম।
গত নভেম্বরে মার্কিন প্রসিকিউটররা আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি ও কোম্পানিটির আরো সাতজন নির্বাহীর বিরুদ্ধে ভারতে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।