সাবেক মেয়র আতিকসহ ৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:১৭
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতাকে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও সদস্য বিচারপতি মো: মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী এ আদেশ দেন।
আতিকুল ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য পাঁচ নেতা হলেন- রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো: শাহিনুর মিয়া, উত্তরা পশ্চিম থানার সভাপতি মনোয়ার ইসলাম চৌধুরী, গাজীপুর মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের সভাপতি মো: বশির উদ্দিন ও ঢাকা মহানগর উত্তরের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের বিভিন্ন মামলায় তারা বর্তমানে গ্রেফতার আছেন।
এই ছয়জনকে হাজির করার আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ। আদালতের নির্দেশের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা উত্তরে প্রায় ২০০ লোক নিহত হয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে ভূমিকা ছিল সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের। আর অন্য পাঁচ আসামি সরাসরি নির্দেশনা পেয়ে ঘটনাস্থলে থেকে তা বাস্তবায়ন করেছেন।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর উত্তরায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে একটি মামলার কার্যক্রম চলছে বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো না হলে তারা (সাবেক মেয়র আতিকুল ও আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা) বিভিন্ন মামলায় জামিন পেলে মামলার তদন্ত ব্যাহত হবে। যথাযথ ও কার্যকর তদন্তের জন্য তাদের ট্রাইব্যুনালের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জানানো হয়।
এ দিকে উত্তরায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন খুবই প্রভাবশালী সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পারোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন। তবে তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি।
এসি জাবেদ ইকবাল গ্রেফতার : জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক সহকারী কমিশনার (এসি) জাবেদ ইকবালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, এএসপি জাবেদ ইকবাল ডিবির তৎকালীন এসি। জুলাই-আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।
রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহ আলম মো: আখতারুল ইসলাম সিলেটের কর্মস্থল ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সিলেট থেকে হঠাৎ পালিয়ে গেছেন। কাউকে কিছু না জানিয়েই গত ১৬ দিন ধরে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি এরই মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরকে জানানো হয়েছে। তার অনুপস্থিতির বিষয়টি পুলিশ বিভাগে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো: মুশফেকুর রহমান দৈনিক নয়া দিগন্তকে মঙ্গলবার বিকেলে এডিশনাল এসপি আখতার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এডিশনাল এসপি আখতার ছুটিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ছুটি কাটিয়ে আর কর্মস্থলে ফিরে আসেননি।
ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সিলেটের পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসানও এডিশনাল এসপি আখতারের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন আখতারুল ইসলাম গত ২৬ জানুয়ারি কর্মস্থলে ছিলেন। এর পরের দিন থেকেই তিনি আর কর্মস্থলে আসেননি। কাউকে না জানিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে জানানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে ও জানান তিনি।
ডিএমপি থেকে সিলেটে বদলি
রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় গণহত্যার নেতৃত্ব দেয়া এই এডিশনাল এসপি আখতার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)-এর রমনা জোনের এডিসির দায়িত্বে ছিলেন। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সিলেটে বদলি করে পুলিশ সদর দপ্তর। এরপর অনেকটা চুপিসারে তিনি সিলেটে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন। সিলেটে প্রায় ৫ মাস কোনোমতে অতিবাহিত করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যান।
শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলামকে ডিবিতে কর্মরত অবস্থায় ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রমনা জোনের এডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। তিনি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রংপুর সিটি কর্পোরেশনের একাধিকবারের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফিজের মেয়ের জামাই।