রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব
- হাবিবুর রহমান
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩২
বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে পৃথকীকরণে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সংস্থা গঠন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশসহ বিচার বিভাগকে গতিশীল করতে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।
বুধবার কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক, ফরিদ আহমেদ শিবলী, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, মাসদার হোসেন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট তানিম হোসেইন শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আরমান হোসাইন।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ : আদালতের রায়ে চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগের ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এর জন্য একটি বোর্ড প্রতিষ্ঠা ও সেই বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা সুপারিশে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন’ সংক্রান্ত ৬ নম্বর সুপারিশের সার সংক্ষেপে বলা হয়, ‘আদালত কর্তৃক চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বোর্ড প্রতিষ্ঠা, যার সুপারিশের ভিত্তিতে ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় : সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনক্রমে পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে নির্বাহী কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে এসবের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনয়ন। সে উদ্দেশ্যে বিচার-কর্মবিভাগের সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন। সংবিধানের ৮৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংযুক্ত তহবিলের উপর দায়যুক্ত ব্যয়ের আওতায় বিচার-কর্মবিভাগের বিচারক ও কর্মচারীদের পারিশ্রমিক অন্তর্ভুক্ত করা।
ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের সুপারিশ : হাইকোর্ট বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘রাজধানীর বাইরে প্রশাসনিক বিভাগীয় সদরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের জন্য নিম্নবর্ণিত আইনগত বৈশিষ্ট্য ও বান্ধব বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন ও সংশোধনের মাধ্যমে যথাযথ ও সুনির্দিষ্ট বিধান অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হচ্ছেঃ (অ) প্রত্যেকটি স্থায়ী বেঞ্চ কোন কোন এলাকা থেকে উদ্ভূত মামলা গ্রহণ করতে পারবে তা সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে, বিচার কার্য পরিচালনা এবং রায়, আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদি প্রদানের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বা অবিভাজ্যতা বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ, স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে সারা দেশব্যাপী কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা বিভাজিত হবে না এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণœ হবে না। এর ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণ তাদের নিকটতম স্থায়ী বেঞ্চে মামলা দায়েরের সুবিধা পাবে।