০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

দুর্নীতির অভিযোগে মন্নুজান ও শিবলীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

-

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল দুদকের মহাপরিচালক মো: আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আসামি মন্নুজান ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শ্রম অধিদফতরের উপপরিচালক থেকে পরিচালক পদে পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে ডিপিসির সুপারিশকৃত গ্রেডেশন তালিকার ৩ নম্বরে থাকা শামীমা সুলতানা বারীকে বাদ দিয়ে ডিপিসির সুপারিশের বাইরে ১৬ নম্বর তালিকায় থাকা মিজানুর রহমানকে পদোন্নতি দিয়েছে। এ জন্য মন্নুজান সুফিয়ান ও মিজানুর রহমানকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক আরো জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক থেকে উপ-মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে ডিপিসির পদোন্নতির জন্য সুপারিশকৃত যোগ্যপ্রার্থী জোবেদা খাতুনকে বাদ দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে গ্রেডেশন তালিকার ৪৮ নম্বরে থাকা আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাতকে পদোন্নতি দেন। এ জন্য দ্বিতীয় মামলায় মন্নুজান সুফিয়ান, আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাতকে আসামি করা হয়েছে।
পৌনে ৪ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন : আসামি শিবলী রুবাইয়াতসহ ৬
৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপপরিচালক মাসুদুর রহমান বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। আসামিরা হলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম, মোনার্ক হোল্ডিং ইন করপোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের মালিক আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এফএভিপি ইসরাত জাহান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখার অপারেশন ম্যানেজার ইকবাল হোসেন ও ব্যাংকটির এসইভিপি, অডিট অ্যান্ড ইনপেকশন ডিপার্টমেন্ট ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুয়া বাড়ি ভাড়া চুক্তিনামা দেখিয়ে আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার ৩০৮ ইউএস ডলার ঘুষ গ্রহণ করে এবং ভুয়া পণ্য বিক্রয় চুক্তি দেখিয়ে পণ্য রফতানির কৌশলে ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকাসহ ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ৩ লাখ ৬১ হাজার ডলার বা ৩ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার ২৪০ টাকা অবৈধ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনার সুযোগ করে দেয়ায় মানিলন্ডারিং ধারায় অভিযোগা আনা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৫-এ, ৪২০, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গতকাল তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠালে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতকে ২০২০ সালে প্রথম দফায় বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত সাধারণ বীমা করপোরেশনেরও (এসবিসি) চেয়ারম্যান ছিলেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তার পাসপোর্ট বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে গত ৯ অক্টোবর দুদকের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত।
এ ছাড়া শিবলী রুবাইয়াত ও তার ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামী ব্যাংকে থাকা হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। একই সাথে অবরুদ্ধ করা হয়েছে তাদের সব বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব।
অভিযোগ রয়েছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান থাকাকালীন পুঁজিবাজারের কারসাজির সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে শিবলী রুবাইয়াতের কাছে অর্থ এসেছে বলে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।


আরো সংবাদ



premium cement