হেফাজতে আসামিকে অমানবিক নির্যাতন পুলিশ কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে তলব
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:০৪
রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র আয়াজ হককে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা মামলার আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইনজামামুন ইসলাম ওরফে জিসানকে হেফাজতে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ কর্মকর্তা সহিদুল বিশ্বাসকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ আয়াজ হত্যা মামলার আপিল শুনানিকালে এ আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, আয়াজ হত্যা মামলার আসামি ইনজামামুন ইসলাম ওরফে জিসানকে একাধিকবার রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহিদুল বিশ্বাস। নির্যাতনের কারণে তার পায়ে পচন ধরে যায়। ২০১৪ সালে জিসানকে দুইবার রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ তার স্বীকারোক্তি আদায় করে। নির্যাতনের পর তখন জিসানের পায়ে পচন ধরে যায়। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ ভর্তি করাতে হয়। তাকে টানা ১৫ দিন চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। চিকিৎসার পরও জিসান স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলে। এখন পর্যন্ত তার এক পা অনুভূতিহীন। এ বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরেছি। রেকর্ড থেকে দেখিয়েছি। এরপর আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তা সাহিদুল বিশ্বাসকে তলব করে তার এমন আচরণের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, আদালতকে এটিও বলব যে, সাহিদুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতন এবং মৃত্যু আইনে যেন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়। কারণ এই মামলার ভুক্তভোগী পক্ষ উচ্চপর্যায়ের আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে এই কাজ করিয়েছেন। শুধু তাই না, বিচারিক কর্মকাণ্ডকেও তিনি বাধাগ্রস্ত করেছিলেন তখন। আমার বিশ্বাস, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সব তথ্য বের হয়ে আসবে। কেন তিনি (সাহিদুল বিশ্বাস) নির্যাতনের আশ্রয় নিয়েছিলেন। কে তাকে নির্দেশ দিয়েছিল। আমরা সেই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নামও তুলে আনতে চাই। এই মামলায় শুধু প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকেই ব্যবহার করা হয়নি, বিচারিক প্রক্রিয়াকেও অত্যন্ত উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপে বিচার নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর কলেজ ফুটবল প্রীতি টুর্নামেন্টের বিরোধের জের ধরে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র আয়াজ হককে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যার দায়ে একজনকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। আসামিরা সবাই সিটি কলেজের ছাত্র। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ইকবাল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আসামি ইনজামামুন ইসলাম ওরফে জিসানকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- তৌহিদুল ইসলাম, মশিউর রহমান আরাফ, তৌহিদুল ইসলাম শুভ, আবু সালেহ মো: নাসিম ও আরিফ হোসেন রিগ্যান। রায় ঘোষণার সময় কারাগারে থাকা ইনজামামুন ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হয়। অন্যরা পলাতক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৯ জুন সিটি কলেজের প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি ও খরচ বাবদ টাকা তোলার বিষয় নিয়ে আয়াজের বড় ভাই সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আশদিন হকের সাথে আসামিদের কথাকাটাকাটি ও পাল্টা-পাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ওই দিন বিকেলে ধানমন্ডি থানাধীন জিগাতলায় যাত্রীছাউনির কাছে আয়াজকে একা পেয়ে আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে। আয়াজকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আয়াজ হত্যার ঘটনায় তার বাবা আইনজীবী শহীদুল হক ২০১৪ সালের ৯ জুন ধানমন্ডি থানায় সিটি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছয় ছাত্র ইনজামামুন ইসলাম ওরফে জিসান, তৌহিদুল ইসলাম, মশিউর রহমান আরাফ, তৌহিদুল ইসলাম শুভ, আবু সালেহ মো: নাসিম ও আরিফ হোসেন রিগ্যানের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর ২০১৫ সালের ১৩ মে ধানমন্ডি থানার এসআই সহিদুল বিশ্বাস ৪৭ জনকে সাক্ষী করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের আদেশ দেন। বিচার চলাকালে আদালত ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা