হাসিনার পতনের পর ভারতের সাড়া নেই বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে

হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সাড়া না পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের বহুল প্রত্যাশিত বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে এই প্রকল্পে সরকার জাপানের কাছে সহায়তা চেয়েছে। জাপান রাজি হলে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে এবং উত্তরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। এই প্রকল্পে ৮৫ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সাথে বগুড়াসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের রেলযোগাযোগ আরো সহজ করার লক্ষ্যে ভারতীয় অর্থায়নে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ বগুড়ার রানীরহাট থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার এম মুনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ৭৩ কিলোমিটার ও কাহালু থেকে রানীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে তৎকালীন হাসিনা সরকার যা একনেক সভায় অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর। এতে মোট খরচের ৫৬ ভাগ অর্থায়নে রাজি হয় ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২৩ সালের ৩০ জুন। এরপর ভারতের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে অনিশ্চয়তার কারণে প্রকল্পটি ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের নকশা অনুমোদন করে পিডি নিয়োগ করে ভারত। এ প্রকল্পে মোট ৯৬০ একর জমি দরকার। এর মধ্যে বগুড়া জেলা সদর, শেরপুর, কাহালু ও শাজাহানপুর উপজেলার ৫৬ মৌজার প্রায় ৪৮২ একর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও সদর উপজেলায় ৪২০ দশমিক ৬৮ একর ভূমি দখলের প্রস্তুতি চলছে। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২৬ সালের ৩০ জুন। প্রকল্পে দুটি জংশন ও ৬টি স্টেশন নির্মাণের কথা রয়েছে। জংশন দুটি হলো- শাজাহানপুর উপজেলার রানীরহাট ও সিরাজগঞ্জ সদরের এম মুনসুর আলী। এ ছাড়া স্টেশন ৮টি হলো- বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া, শেরপুর উপজেলার শেরপুর, ছোনকা ও চান্দাইকোনা, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার রায়গঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের কৃন্চদিয়া। মোট ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বগুড়ার রানীরহাট জংশন থেকে সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত ৭৩ কিলোটিমার এবং বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের ব্যস্ততা এড়াতে কাহালু স্টেশন থেকে রানীরহাট জংশন পর্যন্ত ১২ কিলোটিমার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ। বর্তমানে বগুড়া থেকে ঢাকা যাতায়াতে পাবনার পাকশী ঘুরে যমুনা সেতুর উপর দিয়ে প্রায় ১২৩ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। কিন্তু এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত মাত্র ৭৩ কিলোমিটার পথ যেতে হবে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে অর্থাৎ বর্তমানে বগুড়া থেকে ঢাকা যেতে যেখানে ১১-১২ ঘণ্টা সময় লাগে সেখানে সময় লাগবে মাত্র ৫-৬ ঘণ্টা। এ দিকে ভারতীয় অর্থায়নে অনিশ্চয়তার কারণে প্রকল্পটি স্থবির হয়ে পড়েছে। বর্তমানে হুকুমদখল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান সাজু বলেছেন, ভারতীয় অর্থায়ন অনিশ্চিতের কারণে সরকার জাপান সরকারের (জাইকা) কাছে অর্থ চেয়েছে। সেটা মিললে কাজ শুরু হবে। রেলওয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় অর্থায়নে গৃহীত কুলাইড়া-শাহবাজপুর রেলাইন নির্মাণ প্রকল্পের কর্মচারীরা হাসিনার পতনের পর ভারতে ফেরত গেছে। ফলে সেই প্রকল্পটিও বন্ধ রয়েছে ভারতের কারণে। বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি হুকুমদখল কর্মকর্তা মোছা: মুর্শিদা খাতুন বলেছেন, বগুড়া জেলা অংশের ৪৮২ একর ভূমি হুকুমদখলের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ভূমি মালিকদের নতুন করে চিঠি দেয়া হবে।