২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৫ রজব ১৪৪৬
`
নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি চিঠি

বাংলাদেশীদের ওয়ার্ক পারমিট বন্ধ করতে পারে ক্রোয়েশিয়া

-

চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে ক্রোয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিগগিরই বাংলাদেশী শ্রমিকদের নতুন করে ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু বন্ধ করতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে না পারলে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটি দীর্ঘদিনের জন্যই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গত ২৩ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তারেক মুহাম্মদ নামের এক কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত চিঠিটি ই-মেইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি (ইই অ্যান্ড সিআইএস) এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের (কর্মসংস্থান শাখা) যুগ্ম সচিবের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্রোয়েশিয়া সরকারের সাথে স্বীকৃত ছিল রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সন্দেহজনক অনুশীলনের কারণে বাংলাদেশী কর্মীদের আর ক্রোয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ক পারমিট বা ভিসা দেবে না। আমরা আরো জানতে পারলাম, ২০২৪ সালে ক্রোয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী কর্মীদের ১২ হাজার ৪০০ ওয়ার্ক পারমিট বা ভিসা দিয়েছে। এসব ভিসার মধ্যে আট হাজার শ্রমিক কখনোই ক্রোয়েশিয়ায় আসেনি। বাকি ৪ হাজার ৪০০ জনের মধ্যে মাত্র পাঁচ ভাগ ক্রোয়েশিয়ায় এসে কাজ করছেন। যেহেতু বাংলাদেশী শ্রমিকরা ক্রোয়েশিয়ান পারমিট নিয়ে অন্যান্য শেনজেন দেশে অবৈধভাবে বসবাস ও কাজ করছে, তাই ইইউ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ক্রোয়েশিয়া সরকারকে অবৈধ অভিবাসন রোধে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সম্ভবত এটি শিগগিরই ক্রোয়েশিয়ান মিডিয়াতে চলে আসবে যা বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশের সুনামকে মারাত্মক ক্ষুণœ করবে।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার বাংলাদেশী ক্রোয়েশিয়ায় বসবাস করছে এবং বিভিন্ন পদে কাজ করছে। তারা বেশির ভাগ নির্মাণ, রেস্তোরাঁ, খাবার সরবরাহসহ ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত। প্রবাসী শ্রমিকদের কাজের অবস্থা, বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশের তুলনায় ভালো। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশীদের ক্রোয়েশিয়ায় আসার পর সেনজেন দেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
চিঠিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাথে বাংলাদেশী কর্মীদের অন্য দেশে চলে যাওয়া ঠেকাতে তদারকি ব্যবস্থার সুযোগ রেখে ক্রোয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে একটি খসড়া কর্মী সহযোগিতা চুক্তি (এমওইউ) করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেয়া হয়। ওই খসড়াটি মিশনের সাথে ভাগ করা যেতে পারে উল্লেখ করে বলা হয়, যাতে আমরা অবিলম্বে ক্রোয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করতে পারি। তাদের বোঝাতে হবে, বাংলাদেশ এ ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনটি করতে না পারলে কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার সম্ভবনাময় শ্রমবাজার দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

গতকাল ইউরোপের দেশ সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশর একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের শ্রমবাজারে লোক পাঠানোর সুযোগ থাকলেও মনে হচ্ছে আমাদের সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের তেমন মনোযোগ নেই। তাদের কোনো তোড়জোড় দেখি না। তারা কর্মী পাঠানোর চেয়ে আইন করে সবাইকে পেরেশানিতে রাখতেই বেশি পছন্দ করছেন।
তিনি বলেন, এমনিতেই রোমানিয়াগামী লাখ লাখ শ্রমিক বাংলাদেশে পাসপোর্ট এবং এর সাথে অগ্রীম টাকা জমা দিয়ে ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে ভারতের দিল্লিতে থাকা রোমানিয়ার দূতাবাস থেকে কারো ভিসা না হওয়ায় দিন দিন সমস্যা আরো বাড়ছে। এখন তো আরো এই সুযোগ নাই। কারণ ভারত সরকার বাংলাদেশীদের এখন তার দেশে যেতে ভিসাই ইস্যুই করছে না। শুধু রোমানিয়া নয়, ইউরোপ যাওয়ার জন্য অনেক শ্রমিক দেশেই অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। অনেকে যেতে না পেরে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। অনেকে আবার প্রতারিত হচ্ছেন। এসব বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করা উচিত।
এর আগে ঢাকার নয়াপল্টনের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের জনশক্তি মার্কেটে হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ বিদেশগামী বিভিন্ন রিক্রুটিং ও অখ্যাত অফিসে ইউরোপের দেশ রোমানিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট ও অগ্রীম টাকা জমা দিয়ে মাসের পর মাস ঘুরছেন। কিন্তু এদের মধ্যে হাতেগোনা কিছু লোকের ভিসা হওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেক সময় জনশক্তি ব্যুরোতে ফেইক ভিসা ধরা পড়ছে। ফেসবুকের মাধ্যমে ইউরোপে লোক পাঠানোর জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান কৌশলে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্সির নাম না থাকায় অনেকেই সেখানে টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। এসব বিষয়ে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা আরো বাড়াতে হবে। এমনিতেই বিদেশে অনেক দেশেরই শ্রমবাজার এখন বন্ধ হয়ে আছে। শুধু সৌদি আরব আর হাতেগোনা দুই-চারটা দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশেই তেমন শ্রমিক যাচ্ছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement