শিক্ষা সংস্কারে কমিশন হচ্ছে না
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০২
বিভিন্ন পক্ষ থেকে জোরালো দাবি থাকলেও আপাতত শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করবে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার; বরং শিক্ষা কমিশন গঠনের আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রশাসন থেকে দুর্নীতি কমানোর ওপরেই গুরুত্ব দিতে চাইছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। গতকাল বুধবার দুপুরে পরিকল্পনা কমিশনে শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব)-এর সদস্যদের সাথে মতবিনিময়কালে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এসব কথা বলেন।
শিক্ষা কমিশন গঠন করা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। আমার বিবেচনায় শিক্ষা প্রশাসনকে আগে অন্তত দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। শিক্ষা প্রশাসনকে একটি সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, অনেক দফতরে পরিবর্তন বা বদলি করা হলেও সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে না। আমাদের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কম্পোনেন্টে বহুকিছু মেরামত করতে হবে। এই খাত এখন চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। আগে শিক্ষা খাতের সব বিশৃঙ্খলা দূর করে দুর্নীতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তবে তিনি বলেন, শিক্ষা কমিশন গঠন করা না হলেও আমরা একটু সময় নিয়ে হয়তো একটা ‘শিক্ষা উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠনের বিষয়ে উদ্যোগ নেবো। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এর আগেও তো অনেক কমিশন হয়েছে, সেখানে কি কোনো ফল পাওয়া গেছে? সমস্যার সমাধান না করে কমিশন গঠন করা হলে সেই কমিশন সত্যিকার অর্থে কোনো কাজই করতে পারবে না। তাই আগে চাই সংস্কার, তারপর যদি কমিশন গঠন হয় তাহলেই সেই কমিশন প্রকৃত অর্থে কাজ করতে পারবে। অন্যথায় আগের সব কমিশনের মতো নতুন কমিশনও ব্যর্থ হতে বাধ্য।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের দুর্নীতি এক দিনে সমাধান করা সম্ভব না। আমি মন্ত্রণালয়ে একবার বলেছি, সেটিকে দুর্নীতি মুক্ত করতে চাই। সেটি মন্ত্রণালয়ের সবাই শুনেছে; কিন্তু এই বার্তা শিক্ষার অধিদফতরগুলোতেও দিতে হবে। তারপর দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে একটি উদাহরণ তৈরি করতে হবে। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেনÑ ইরাবের সভাপতি ফারুক হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান সালমান, সহসভাপতি শাহেদ মতিউর রহমান, ইরাবের সাবেক সভাপতি সাব্বির নেওয়াজ, নিজামুল হক, শরীফুল আলম সুমনসহ সংগঠননের নেতৃবৃন্দ।
এনটিআরসিএ’র মাধ্যমেই শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিভুক্তি : শিক্ষকদের নিয়াগ ও এমপিওভ্ুিক্তর প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে প্রায় সময়েই আর্থিক লেনেদেনের অভিযোগ আসছে। আগে শিক্ষাভবনে এমপিওভুক্তি দেয়া হলেও এখন তা মাউশির নয়টি অঞ্চলে দেয়া হচ্ছে। এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতি ও অর্থ লেনদেন এড়াতে প্রয়োজনে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)-এর মাধ্যমে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি একসাথে সম্পন্ন করা হবে।
ভর্তির অতিরিক্ত আয় ফেরত নেবে সরকার : গুচ্ছে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরপর তিনবার চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিতে কত টাকা ব্যয় হতো আর এখন গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তারা কত টাকা আয় করছে এই দু’টি বিষয়ের হিসাব নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে এই হিসাব নেয়া হবে। তিনি বলেন, পলিটিক্যালি জেলা, উপজেলা এমনকি গ্রামপর্র্যায়ের অনেক কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। আবার জাতীয়করণ না করলেও ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে কলেজ গড়ে তুলে সেগুলো অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এভাবে গড়ে উঠল আজকের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি বেকার। উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা প্রথম খারাপ হয় ১৯৭২ সালে। বঙ্গবন্ধুর সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ইউসুফ আলী। তার একটা প্রচণ্ড ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। সেটি হলোÑ ভালো যে কলেজগুলো ছিল, নাম করা কলেজ যাকে বলে; বিএম কলেজ, ঢাকা কলেজ, মুরারীচাঁদ কলেজ, রাজশাহী কলেজ; প্রথমে এগুলোকে ইউনিভার্সিটি কলেজ বানিয়ে দিয়েছিল।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় জোর দিলেও বাংলাদেশে কেবল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পড়িয়ে বেকার তৈরি করা হচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী টেকনিক্যাল শিক্ষা গ্রহণ করে। আর আমাদের এখানে উল্টো। সবাই অনার্স-মাস্টার্স পড়ে বেকার হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলো তো আছেই, পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণে সময় চাই : স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের বেতনভাতার দাবির বিষয়টি যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা প্রাথমিকের সমমান। অথচ প্রাথমিককে জাতীয়করণ করা হয়েছে; কিন্তু ইবতেদায়িকে বাইরে রাখা হয়েছে। ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন এক হাজার ৫০০, প্রধান শিক্ষকের বেতন তিন হাজার টাকা মাত্র। তাদের সমস্যাটা প্রকট; কিন্তু এই মুহূর্তে অনশন করে আমাদের বিব্রত করা ছাড়া আর কিছুই হবে না। এটি না করে বরং কী করে কী করা যায় সেই চিন্তা করতে আমাদের সময় দিতে হবে। অগ্রাধিকার অনুযায়ী আমরা যাতে কাজ শুরু করে দিতে পারি। আমরা শুরু করতে পারলে পরবর্তী সরকার এসে বুঝবে যে, এরা আসলেই বঞ্চিত। এদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা