১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১২ রজব ১৪৪৬
`
প্রেস উইংয়ের ব্রিফিং

শুল্ক হার বাড়ায় মিনিমাম প্রভাব পড়বে

-

নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপের ফলে মানুষের ওপর ‘মিনিমাম’ প্রভাব পড়বে বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি তা খুবই মিনিমাম হবে, ম্যাসিভ প্রভাব পড়বে না।’
গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
আইএমএফের ঋণের উপর নির্ভর করে শুল্ক কর বাড়ানোটাকে কিভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আইএমএফের ঋণটা মুখ্য না। তারা ক্ষুদ্র অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে ভালো পরামর্শ দেয়। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আইএমএফ ঋণ দিলে, তাদের সামনে রেখে অন্যরা আসে (বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্যরা)। এটা বিদেশ থেকে বেসরকারি বিনিয়োগকারী আসতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কারণ তারা বিনিয়োগ করার আগে আইএমএফের প্রতিবেদন দেখে থাকে। যত ভালো রাজস্ব থাকলে একচেঞ্জ মার্কেট স্থিতিশীল থাকবে। তাতে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। পরিকল্পনাকারী সব অর্থনীতিবিদই বোদ্ধা, তারা জানেন কি করছেন।
ম্যাক্রো ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটির প্রয়োজনে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, সেটা না হলে টাকার মান কমে যাবে। এখন ১২৫ টাকায় ডলার কিনছেন; কিন্তু একটা সময় আসবে ১৯০ টাকা দিয়ে কিনতে হবে। ম্যাক্রো ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটি বাড়ানোর জন্য ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াতে হবে। এটা এমন জায়গায় চলে গেছে, তা টেকসই না। পাঁচ মাসে রাজস্ব শর্টফল হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। খরচ তো মেটাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ভালো বুঝেন। বর্তমান অর্থনৈতিক টিমটি দেশের ইতিহাসে সেরা। তারা সেভাবে পরিকল্পনা করছেন।
শুল্ক বাড়ানোর কারণে মুদ্রাস্ফীতি এবং মানুষের কষ্ট বাড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, মোটেও না। বরং দেশের অর্থনীতি ভালো হলে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনে। এটা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের সাথে কথা বলতে পারেন।
এমন সিদ্ধান্তে সরকার অজনপ্রিয় হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অজনপ্রিয় হওয়ার কোনো প্রশ্নই দেখছি না। বরং সরকার দেশের অর্থনীতির অবস্থা যাতে ঠিক থাকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখছে। আমি মনে করি বিষয়টি প্রেক্ষাপট ও কেন করা হয়েছে তা মানুষকে বুঝানো সাংবাদিক ও সবার কর্তব্য। আমরা অনেক জনপ্রিয় কথা বলতে পারি। জনপ্রিয় হওয়ার চেয়েও বাস্তবতাটা কি? যে ধরনের ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে (আওয়ামী লীগ সরকার) গেছে।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কোথায় কোথায় অপচয় হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। দিনে একটি ট্রেন চলার জন্য রেললাইন করেছে। টানেলটার (কর্ণফুলী নদীর তলদেশে) কোনো দরকারই ছিল না। এখন আমাদের প্রতিদিন লক্ষ লাখ টাকা খরচ দিতে হচ্ছে। সাথে তো চুরি ছিলই। পিয়ন থেকে শুরু করে শেখ পরিবারের কে না চুরি করে নাই। সে জায়গায় আমরা চাচ্ছি অর্থনীতিটাকে ঠিক করতে- এটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাসের দাম বাড়ায় অসম প্রতিযোগিতা হবে কি না এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, শিল্প কারখানের ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে জ্বালানি। আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য রেশনাইলাজ করা হচ্ছে। এতে কারখানাগুলোর কমপেটিটিভনেস বাড়বে। আমরা চাই তারা যেন আন্তর্জাতিকভাবে কমপেটিটিভ হোক। আর গ্যাসের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে উৎপাদকদের কাছে অ্যাভেলেবেল কি না। সবাই গ্যাস চাচ্ছে। তারা অনেক অর্ডার পাচ্ছেন। এ বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন।
ভারতের সাথে অসম চুক্তি বাতিলের কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা নির্ধারণ ও উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেগুলো হলো- স্থল সীমান্ত চুক্তি ১৯৭৪, বর্ডার ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন-১৯৭৫, ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট প্রটোকল-২০১১ এবং কো-অর্ডিনেটর বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান-২০১১।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে খরচ কমানোর ক্রমাগত চেষ্টার কথা জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিদেশ সফর সর্বনিম্ন লোক নিয়ে হচ্ছে, তার মধ্যেও নিরাপত্তা পারপাসে লোক সংখ্যা বেশি। কিন্তু আগে ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষ নিয়ে বিদেশ যেতেন (শেখ হাসিনা)। সবখানে অর্থ অপচয় করা হয়েছে। চট্টগ্রামে টানেল করলে, করিডোর পেরিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাড়িতে তিনি রেস্ট নিতেন, সেখানে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে সেভেন স্টার হোটেল করেছেন। এগুলো কার টাকা? তার আত্মীয়স্বজনের টাকায় নয়, বাংলাদেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায়।
শ্বেতপত্র পুরোটা সবাইকে পড়ার অনুরোধ করে তিনি বলেন, দেখবেন, কিভাবে জনগণের টাকাগুলো অপচয় করা হয়েছে এবং লুটপাট করেছেন (শেখ হাসিনা)। তার কিছু নমুনা ব্রিটিশ... দেখছেন। সে জন্য আমরা সত্যিকার অর্থে চাচ্ছি, বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপি এমন একটা পর্যায়ে যাক, যাতে দেশের ইকোনমি গ্রোথ করে। ট্যাক্স জিডিপি কমে যাওয়া মানে হচ্ছে, যে ঋণ আপনি করেছেন, তা শোধ করার সুযোগ না-ও হতে পারে। সবকিছু বিবেচনা করেই এটা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোতে মানুষের উন্নয়নে এই টাকাগুলো ব্যয় হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, ট্যাক্স বাড়ায় মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়বে, অন্য বিকল্পে যাওয়া যেত, এ ক্ষেত্রে প্রত্যাহার বা কমানোর চিন্তা সরকারের আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আমরা তাদের কথাগুলো শুনছি- এটাই বলতে পারি।
আওয়ামী লীগের সময় দেশে-বিদেশে অপচয় করা জনগণের টাকা ক্রোক বা স্যাংশন করা বা ওই সম্পদের ওপর ট্যাক্স বসানোর কোনো কাজ হচ্ছে হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো বিষয়গুলো নিয়েই আমরা কাজ করছি। একটা টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। কিভাবে ওই টাকাগুলো আনা যায়, এটা আমাদের টপ প্রায়োরিটি। এই চুরিটা কোথা থেকে হয়েছে, সেটা ট্রেস করা হচ্ছে। আমরা দেখছি, কোথায় কোথায় কিভাবে টাকাগুলো গেছে, কোনো অফশোর অ্যাকাউন্টে গেছে, চুরি করে কোথায় নিয়ে গেছে...। সরকারের জায়গা থেকে অনেক বেশি সতর্কতার সাথে এসব নিয়ে কাজ হচ্ছে, যা যা করা দরকার, সবই করা হচ্ছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন, বাংলাদেশ ব্যাংক, মানিলন্ডারিং বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের শক্তিশালী করা হয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, টাকাগুলো যেসব দেশে চলে গেছে, তাদের সাথে আমরা কন্টাক করছি। তাদের আমরা জানাচ্ছি, টাকাটা তোমার ওখানে চলে গেছে, তুমি আমাদের সাথে কো-অপারেট করো। আমরা সবার কাছ থেকে সাপোর্ট পাচ্ছি। আমরা কোনো দেশের কথা বলব না।


আরো সংবাদ



premium cement
শুল্ক হার বাড়ায় মিনিমাম প্রভাব পড়বে জুলাই বিপ্লবে নিহত মাহবুবের পরিবারের পাশে তারেক রহমান সীমান্ত সম্ভারে ৮ মিনিটে দিন-দুপুরে ১৫৯ ভরি স্বর্ণ চুরি সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব : নজরুল ইসলাম খান পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ কেরানীগঞ্জ কারাগারের অস্থায়ী আদালতে চলবে আমানতকারীদের স্বার্থে পর্ষদ সভায় ভূমিকা রাখছেন না স্বতন্ত্র পরিচালকরা এক নারীর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত সুস্থ আছেন রুগ্ণ প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নেয়ার এক্সিট পলিসি চান ব্যবসায়ীরা নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তান দল ঘোষণা পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী আহত তেল মারা বন্ধ করেন : সরকারি কর্মচারীদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল