আমানতকারীদের স্বার্থে পর্ষদ সভায় ভূমিকা রাখছেন না স্বতন্ত্র পরিচালকরা
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:১৫
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালকরা কোনো ভূমিকা রাখছেন না। এ কারণে আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী কাজকর্ম হচ্ছে পর্ষদ সভায়। এতে অনেক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতকারীদের অর্থ এখন ফেরত দিতে পারছে না। সামগ্রিক কার্যক্রম থেমে গেছে। ফলে মূলধন ভেঙে দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বাতন্ত্র্য পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করল বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজিরবিহীন লুটপাট করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি প্রতিষ্ঠান দেউলিয়ার পথে গিয়েছিল। সেগুলোকে এখন পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ। ওই সময়ে স্বতন্ত্র পরিচালকরাও পর্ষদের সাথে লুটপাটে অংশ নিয়েছেন। অনেকে নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফাইন্যান্স কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান কঠোর করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রেরিত সার্কুলারে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো) প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই প্যানেল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি সাপেক্ষে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ প্রদান করবে। আর স্বতন্ত্র পরিচালকের পদ শূন্য হলে তা কর্মদিবসের মধ্যে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র পরিচালকের মেয়াদ পূর্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান মেয়াদ শেষ হওয়ার ন্যূনতম ৩০ কর্মদিবস পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। এ বিষয়ে গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর পর্ষদে ন্যূনতম দু’জন স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র পরিচালকগণ ফাইন্যান্স কোম্পানির শেয়ার ধারক হতে স্বাধীন হলেও ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক গৃহীত ঋণ খেলাপিতে পরিণত হওয়ার কারণে স্বতন্ত্র পরিচালকগণও ঋণখেলাপি হয়ে যান। ফলে অনেক ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ইমেজের দক্ষ ব্যক্তিবর্গ ফাইন্যাস কোম্পানিগুলোয় পরিচালক হিসেবে নিযুক্তির বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। এমনকি স্বতন্ত্র পরিচালকগণের মূল দায়িত্ব হলো আমানতকারী ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণে নিরপেক্ষ মতামত প্রদান করার কথা থাকলেও পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকগণের স্বাধীন-নিরপেক্ষ মতামতের কোনো প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদে প্রতিষ্ঠান ও আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বতন্ত্র পরিচালকদের কোনোভাবে বিপক্ষে মতামত দিতে পারছে না। সেজন্য দক্ষতার ভিত্তিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে যোগ্য ব্যক্তির নাম ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে প্রেরণ করতে পারবে। নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে যাচাই বাছাই শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদেরকে প্যানেলভুক্ত করবে।
আরো বলা হয়েছে, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় নিযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালকরা কোনোরূপ অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বা স্বাধীন মতামত প্রদান বাধাগ্রস্ত হলে বা পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে মতামতের প্রতিফলন না হলে তিনি অবিলম্বে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। প্রয়োজনে, পরিচালনা পর্ষদের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার সিদ্ধান্তের কপি তিনি সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবেন। আর ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে ওই ঋণের বিপরীতে স্বতন্ত্র পরিচালকরা ফাইন্যান্স কোম্পানির পক্ষে কোনো গ্যারান্টিপত্রে স্বাক্ষর করবেন না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা