০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

কাগজের দাম বাড়াতে কৃত্রিম সঙ্কট সক্ষমতা থাকলেও বই উৎপাদন বন্ধ

-

কাগজের অভাবে বই ছাপতে পারছে না অনেক প্রেস। যদিও প্রেস মালিকদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন বাজার মূল্যের চেয়ে টন প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার বেশি দামে কাগজ বিক্রি করার কৌশল হিসেবেই কাগজের মিল মালিকরা কৃত্রিম এই সঙ্কট তৈরি করে রেখেছেন। ফলে সক্ষমতা থাকার পরও পুরোদমে পাঠ্যবই মূদ্রণের কাজে যেতে পারছে না প্রেস মালিকরা।

তবে এই সুযোগে নিম্নমানের কাগজেই নোট ও গাইড বই ছাপার মোক্ষম সময় কাজে লাগাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

অন্য দিকে বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা এবং শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে যাতে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা না থাকে সেজন্য আগামী দুই মাস সব ধরনের নোট গাইড বই ছাপার কাজ বন্ধ রাখতে কঠোর নজরদারি করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ইতোমধ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ১১৬টি প্রেসের তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সরকার চাইছে যেকোনো মূল্যে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব শ্রেণীর সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দিতে। আর এজন্য সব ধরনের সহযোগিতাও প্রেস মালিকদের করছে এনসিটিবি।

গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) কয়েকজন প্রেস মালিক নয়া দিগন্তকে জানান, প্রতি টন কাগজের বর্তমান বাজারমূল্য এক লাখ ১০ হাজার টাকা (কমবেশি) । কিন্তু প্রতিদিন প্রেস মালিকদের পাঠ্যবই ছাপতে যে পরিমাণ কাগজ দরকার হয় সেই তুলনায় তারা কাগজ পাচ্ছেন না। অনেক প্রেস মালিক আগেই কাগজের মিল মালিকদের অগ্রিম টাকা পরিশোধ করেও চাহিদামতো তারা কাগজ পাচ্ছেন না। এ ছাড়া এখন বই মূদ্রণের পুরো মওসুম। ফলে সবারই কাগজের দরকার। আর এই সুযোগে প্রতি টন কাগজের দাম ১৫ হাজার থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বাজার সিন্ডিকেট করছে কাগজের মিল মালিকরা। বিষয়টি নিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছেন প্রেস মালিকরা। এখন এনসিটিবিও চেষ্টা করছে কাগজের দামে যেন কেউ সিন্ডিকেট করতে না পারে।

গতকাল এনসিটিবি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে প্রতিটি প্রেসে এনসিটিবি’র মনিটরিং টীম প্রতিদিনই ধারাবাহিকভাবে প্রেসগুলো মনিটরিং করছে। আর এই টীমে সংযুক্ত থেকে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান নিজেও বিভিন্ন প্রেস পরিদর্শনে যাচ্ছেন। কাগজ মিল মালিকদের একজন এই প্রতিবেদককে জানান, আমাদের প্রত্যেক মিলেরই উৎপাদনের একটি নির্দিষ্ট সক্ষমতা থাকে। এর বাইরেও মেশিনের ত্রুটির কারণে কোনো কোনো সময়ে উৎপাদন বন্ধও থাকে। তাই চাহিদামতো কাগজ সরবরাহ করতে আমাদের সমস্যা হয়। দাম বাড়ানোর বিষয়ে এক মিল মালিক জানান, প্রতিটি দ্রব্যেরই দাম উঠানামা করে।

এদিকে সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নোট-গাইড বই ছাপা বন্ধে আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে ডিসিদের ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশও দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। সূত্রমতে সম্প্রতি ঢাকা জেলা প্রশাসককে পাঠানো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর নতুন পাঠ্যবই ছাপা পুরো জানুয়ারিজুড়ে চলবে। এই সময়ে ৪০ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কাজে নিযুক্ত প্রেসগুলোতে যেন নোট ও গাইড বই, ডায়েরি, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি ছাপতে না পারে তা নিশ্চিত করতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য বলা হলো। চিঠিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে ১১৬টি প্রেসের ঠিকানাও দেয়া হয়েছে। আরো কয়েকজন জেলা প্রশাসককে একই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র আরো জানায়, গত ৩ ডিসেম্বর প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম ও সমমান শ্রেণীর বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা হয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর আগে সব ধরনের সহায়ক বই বা নোট-গাইড ছাপা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় এনসিটিবি।

 


আরো সংবাদ



premium cement