আগাছাগুলো উপড়ে ইভিএম ছাড়াই সুন্দর নির্বাচন হবে
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯
আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ১৬ বছরে নানা অনিয়মের কারণে নির্বাসনে চলে গেছে। এখন কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে আগাছাগুলো উপড়ে পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্বাচনী মাঠকে সমতল করে একটি সুন্দর নির্বাচন করা বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য এ সংস্কারগুলো প্রয়োজন। আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার থাকবে না। একই সাথে অতীতে যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছেন তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
নাগরিক সংগঠন (সুজন) সুশাসনের জন্য নাগরিক ও দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে ‘সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রতিবেদন পেশ : তারপর কী?’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন। সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সচিব আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রমুখ। বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, নিজেদের প্রতি নিজেদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। ৫৩ থেকে ৫৪ বছরেও আমরা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত করতে পারিনি। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গেছে। এখন কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে আগাছাগুলো পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পরবর্তী যে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে তারাও মনে রাখবে যে কি প্রেক্ষাপটে তারা ক্ষমতায় এসেছে। আমরা আশা করছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নির্বাচন ব্যবস্থা থাকলে ২ থেকে ৩ টার্মেই মানুষ তাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তখন সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থা একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হবে। সেই আকাক্সক্ষা থেকেই এই সংস্কারের প্রস্তাব করা হচ্ছে এবং আমরা আশাবাদী।
আগে সংস্কার নাকি আগে নির্বাচন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগেও আমরা বলেছি নির্বাচন হলে তো আগেই হতে পারত। সংস্কার করাই হচ্ছে নির্বাচনের জন্য। আমরা চাচ্ছি নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়। এখন যে অপরিচ্ছন্ন মাঠ এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সেজন্য সংস্কার করতেই হবে। এই সংস্কারের পরে আশা করি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এর মাধ্যমে (সংস্কার) আমাদের মধ্যে একটি সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ইউনিয়ন পর্যায়ে ভাগে ভাগে নির্বাচন দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা স্থানীয় সরকার বিষয়ে একটা সমন্বিত আইনের খসড়া করেছি। আমাদের আইনের শাসন কায়েম করতে হবে। একটা সমস্যা হলো আমাদের জাতীয় নির্বাচন হয় সংসদীয় পদ্ধতিতে আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতিতে। ফলে আমরা মেয়র, চেয়ারম্যান নির্বাচন করি। সংসদীয় পদ্ধতিতে হলে কেউ সরাসরি চেয়ারম্যান, মেয়র হতে পারবেন না, আগে মেম্বার হতে হবে। নারী সংরক্ষিত আসনের ক্ষেত্রে আমরা ভারতের আদলে ঘূর্ণায়মান সংরক্ষণ পদ্ধতির প্রস্তাব করেছি।
আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সদিচ্ছা থাকলে আইন ও সংস্কার ছাড়াও ভালো কিছু করা সম্ভব। সদিচ্ছা না থাকলে এগুলো দিয়েও কিছু হবে না। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করে দিলাম, কেননা অন্তরে ভালো কিছু ছিল না।
লিখিত প্রবন্ধে সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার বিষয়ে জনমনে যে আকাক্সক্ষা রয়েছে তা তুলে ধরা হয় এবং কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পেশের পর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটি ধাপ প্রস্তাব করা হয়। প্রথমত, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজসহ সব অংশীজনদের সাথে আলোচনা করা; দ্বিতীয়ত সব কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো নিয়ে সংস্কারের অগ্রাধিকার তথা ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা; তৃতীয়ত কোন সংস্কারগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করবে এবং কোনগুলো নির্বাচিত সরকার করবে তা নির্ধারণ; চতুর্থত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এখতিয়ারভুক্ত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি; পঞ্চমত নির্বাচিত সরকার কর্তৃক যেসব সংস্কার করা হবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় সনদ বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা, যাতে যে দল সরকার গঠন করবে তারা যেন সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে এবং বিরোধী দলগুলোও যেন তাতে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা