১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬
`

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা ৯০ ভাগ সম্পন্ন

-

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি প্রশ্নে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চুক্তিতে পৌঁছানোর আলোচনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হওয়ার খবর দিয়েছে বিবিসি। তবে মূল বিষয়গুলো এখনো আলোচনার টেবিলেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এর মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো ফিলাডেলফি করিডোরে ইসরাইলি সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত রাখা। মিসর সীমান্তের ওই করিডোরটি কৌশলগতভাবে দক্ষিণ গাজার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
বিবিসি লিখেছে, দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনার বিশদ বিবরণ সংবাদমাধ্যমটির কাছে তুলে ধরেছেন ওই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা। এর মধ্যে রয়েছে গাজার সাথে ইসরাইল সীমান্তের দৈর্ঘ্য বরাবর কয়েক কিলোমিটার প্রশস্ত সম্ভাব্য একটি বাফার জোনের প্রস্তাব। ওই এলাকায় ইসরাইলের সামরিক উপস্থিতি বজায় থাকবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

এসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছালে কয়েক দিনের মধ্যেই তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি আলোর মুখ দেখতে পারে। যুদ্ধবিরতির তিন ধাপের প্রথমটিতে প্রত্যেক নারী সেনার মুক্তির বিপরীতে ২০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিবিনিময়ের কথা বলা হয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, ফিলিস্তিনি বন্দীদের নাম নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি, তবে ইসরাইলে ২৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে কারাদণ্ড ভোগ করছেন এমন প্রায় ৪০০ জনের মধ্য থেকে তাদের বাছাই করা হবে। তাদের মধ্যে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক দল ফাতাহর জ্যেষ্ঠ নেতা মারওয়ান বারগুতিও রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার মুক্তির মুক্তির প্রশ্নে ইসরাইল ভেটো দিতে পারে।

ইসরাইলি বন্দীদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেয়া হবে, কারণ কিছু নিখোঁজ জিম্মির হদিস পেতে হামাসের অনুসন্ধানের দরকার বলে মনে করা হচ্ছে। গাজায় ৯৬ বন্দীর মধ্যে ৬২ জন এখনো জীবিত রয়েছে বলে ধরে নিয়েছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের ওই কর্মকর্তা বলেন, আলোচনা অনুযায়ী, মিসরীয়-কাতারি তত্ত্বাবধানে একটি ব্যবস্থার অধীনে গাজার বেসামরিক নাগরিকরা উত্তর দিকে ফিরে আসতে পারবে এবং প্রতিদিন শ’ পাঁচেক ট্রাক ওই অঞ্চলে ত্রাণ নিয়ে আসবে। তিন ধাপের পরিকল্পনার চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৪ মাসের যুদ্ধের অবসান দেখা যাবে, তখন টেকনোক্র্যাটদের একটি কমিটি গাজাকে তত্ত্বাবধান করবে। ওই কমিটিতে তারাই থাকতে পারবেÑ অতীতে যাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ইতিহাস নেই এবং যাদের প্রতি ফিলিস্তিনের সব পক্ষের সমর্থন থাকবে।
যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর তাদের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ফের শুরু করেছে এবং একটি চুক্তি সম্পাদনে উভয় পক্ষ বৃহত্তর সদিচ্ছার কথা জানিয়েছে। এর আগে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে এক দফা আলোচনা চললেও তা চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। ওই সময় স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল হামাস।

হামাস ও ফিলিস্তিনের অন্য দু’টি সংগঠন বলেছে, ইসরাইল যদি ‘নতুন শর্ত আরোপ করা বন্ধ করে’ তাহলেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো ‘আগের চেয়ে আরো সহজ’ হবে। হামাস শনিবার টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে শুক্রবার কায়রোতে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) প্রতিনিধিদের সাথে তাদের বৈঠক হয়েছে। ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ১৪ মাসে ৪৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষ।

গাজায় স্কুল ও হাসপাতালে ইসরাইলি হামলা : শিশুসহ নিহত ৮
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি স্কুল ও দু’টি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে অন্তত আট ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল রোববার স্থানীয় সূত্রের বরাতে আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজা শহরের একটি স্কুলে বোমা হামলা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। স্কুলটি বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন।
এ দিন কামাল আদওয়ান হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনী হাসপাতালের আইসিইউ এবং প্রসূতি বিভাগে সরাসরি গুলি চালিয়েছে।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, হাসপাতালগুলোতে হামলার পাশাপাশি ইসরাইলি বাহিনী মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে বেশ কিছু ভবন ধ্বংস করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই শিবিরে এক বিমান হামলায় অন্তত চারজন নিহত হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিøউএইচও) প্রধান তেদ্রো আধানম গ্যাব্রিয়েসুস এই হামলাগুলোকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং ওই এলাকায় ‘তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’র আহ্বান জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement




up