২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজায় আরো ২১ ফিলিস্তিনি নিহত

-

গাজায় ইসরাইলি হামলা থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা। অবরুদ্ধ এই উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে আরো কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরো ৬১ জন। আলজাজিরা
এ দিকে দখলদার বাহিনীর বিমান হামলায় একই পরিবারের ১২ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সাতজনই শিশু। ফিলিস্তিনি বেসামরিক প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে ওই হামলা চালানো হয়েছে। টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে অবস্থিত খাল্লাহ পরিবারের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে হতাহতের উদ্ধার করছে ফিলিস্তিনি বেসামরিক প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংস্থার সদস্যরা।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে সাতজনই শিশু। সবচেয়ে বড় শিশুটির বয়স মাত্র ছয় বছর। তিনি জানিয়েছেন, ইসরাইলি বিমান হামলায় আরো ১৫ জন আহত হয়েছে। ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে যে, তারা হামাসের একটি সামরিক কাঠামোতে কর্মরত বেশ কয়েকজন সদস্যকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ওই অঞ্চলে কর্মরত আইডিএফ সৈন্যদের জন্য হামাস হুমকিস্বরূপ বলেও উল্লেখ করা হয়।
গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, ইসরাইলি হামলায় ৪৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। তাদের বেশির ভাগই বেসামরিক আর যুদ্ধে তাণ্ডবে ২৩ লাখ জনসংখ্যার অধিকাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজার উপকূলীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের সাথে ইসরাইলের মধ্যে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেই উদ্যোগ তেমন কোনো আলোর মুখ দেখেনি। মধ্যস্থতাকারীদের সাথে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, কাতার ও মিসর যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে ‘কিছু মতপার্থক্য দূর করতে সক্ষম হয়েছে’।
পশ্চিমতীরে মসজিদে আগুন
ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে একটি মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে হিব্রু ভাষায় ‘প্রতিশোধ’ এবং ‘আরবদের মৃত্যু’র মতো ঘৃণ্য ও বর্ণবাদী স্লোগান এঁকে মসজিদের সম্মুখভাগ বিকৃত করা হয়েছে। সালফিত শহরের গভর্নর আব্দাল্লাহ কামিল শুক্রবার বলেন, মারদা গ্রামের বার আল-ওয়ালিদাইন মসজিদ লক্ষ্য করে হামলা চালানো ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার সর্বশেষ ঘটনা।
এক বিবৃতিতে কামিল বলেন, শুক্রবার ভোরে একদল বসতি স্থাপনকারী মসজিদে হামলা চালিয়ে আগুন লাগায়। গ্রামের এক বাসিন্দা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, বসতি স্থাপনকারীরা মসজিদের প্রবেশপথে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং এর দেয়ালে হিব্রু স্লোগান লিখে দেয়। আরেক বাসিন্দা জানান, পুরো কাঠামোতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। মারদা গ্রাম কাউন্সিলের প্রধান নাসফাত আল-খুফাশও বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘একদল বসতি স্থাপনকারীর পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার’ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জাতিসঙ্ঘ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, অধিকৃত পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে মনে করা হয়। গভর্নর কামিল বলেন, বসতি স্থাপনকারীরা এর আগেও ‘ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায়’ গ্রামে প্রবেশ করেছিল। আশপাশের অঞ্চলেও একই ধরনের ভাঙচুর ও দেয়ালে স্প্রে করার খবর পাওয়া গেছে। রামাল্লায় ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এটিকে ‘নির্লজ্জ বর্ণবাদী কাজ’ এবং ‘ইসরাইলের চরমপন্থী সরকার পরিচালিত জনগণের বিরুদ্ধে ব্যাপক উসকানি প্রচারণার’ প্রতিফলন বলে অভিহিত করেছে। ইসরাইলি পুলিশ ও শিন বেত নিরাপত্তাবাহিনী এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, আমরা এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর হিসেবে দেখছি। অপরাধীদের কঠোর বিচারের আওতায় আনতে দৃঢ়তার সাথে কাজ করব।
গাজায় ২ ইসরাইলি সেনা নিহত
উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হামলায় দুই ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। আলজাজিরা জানায়, হামাসের সামরিক বিভাগ আল কাসসাম ব্রিগেডস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের ‘পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে’ এক স্নাইপারসহ মোট দুই ইসরাইলি সেনাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই হামলার বিষয়ে ইসরাইলি বাহিনী এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫০০ জন ইসরাইলি সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য আহত হয়েছে। আহত সৈন্যদের ৩৭ শতাংশ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুরুতর আঘাতে পেয়েছেন। মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, এ ছাড়া আরো অন্তত পাঁচ হাজার ২০০ সেনা মানসিক রোগ আক্রান্ত।


আরো সংবাদ



premium cement