১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
গোলটেবিল আলোচনায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

কিছু উদ্যোগ নিলেই সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে পারবে সরকার

-

কিছু উদ্যোগ নিলেই সরকার প্রায় সবাইকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবে। বিশেষ করে প্রান্তিক আয়ের যে মানুষগুলো টাকার অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে কষ্ট পায় অথবা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করে তাদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যের মূল বাজেট ঠিক রেখে আরো ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পারলেই এই কাজটি করতে পারবে সরকার। বিশেষ করে ক্যান্সারের মতো একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা পেতে পারবে মানুষ। গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ক্যান্সার চিকিৎসায় বাংলাদেশ : অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় স্বাস্থ্য বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামতে এ বক্তব্য তুলে ধরেন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: মো: আব্দুল হাই। স্কয়ার হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: সৈয়দ মুহাম্মদ আকরাম হোসেন বাংলাদেশের ক্যান্সার চিকিৎসা ও সেবার ওপর মূল বক্তব্য তুলে ধরেন। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের সমাজভিত্তিক ক্যান্সার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অনকো ইউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা: মো: আব্দুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, গাইনি অনকোলজিস্ট অধ্যাপক ডা: সায়েবা আক্তার, সাবেক সচিব আবুল কালাম আজাদ, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য মো: আব্দুল্লাহ প্রমুখ। বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম এ সভার আয়োজন করে।

অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ক্যান্সার ও মারাত্মক রোগের জন্য সরকার ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করে বেশির ভাগ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে পারে। এর উপায় হিসেবে তিনি বলেন, দেশে ১৯ কোটি সচল সিম রয়েছে। প্রতি সিমের মালিক যদি দিনে ১ টাকা হিসেবে মাসে ৩০ টাকা দেন তাহলে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা হবে বছরে। এ ছাড়া সিন ট্যাক্স হিসেবে টোবাকো ট্যাক্স থেকে সরকার অতিরিক্ত ২ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা আদায় করতে পারে। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সিএসআর খাত থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা আদায় করতে পারে নাগরিকদের চিকিৎসার সেবার কাজে। তা ছাড়া চিনি, মিষ্টি ও কোমল পানীয় কোম্পানি থেকে মাসে ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স আদায় করতে পারে প্রতি বছর। এর বাইরে সরকারি তহবিল থেকে আরো কিছু দিয়ে বছরে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গড়তে পারে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য। অধ্যাপক আব্দুল হামিদ বলেন, ড. ইউনুস সরকারই পারবেন এটা করে দিয়ে যেতে, তাহলে এটা হবে বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আকরাম হোসেন ক্যান্সার চিকিৎসা বিষয়ে বলেন, শুধু ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার বিদেশ চলে যায়। গার্মেন্ট কর্মী, প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত পানি করা অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশ চলে যায় ক্যান্সারসহ অন্যান্য চিকিৎসায়, এটা আর চলতে দেয়া যায় না। বাংলাদেশে যোগ্য চিকিৎসক যেমন আছে তেমনি আছে ক্যান্সার চিকিৎসায় আধুনিক মেশিন। এমনকি ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ বাংলাদেশ তৈরি করে। তবে চিকিৎসক ও মেশিন প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে। দ্রুততার সাথে আরো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করতে হবে এবং আধুনিক মেশিন আনতে হবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে মাত্র ২৫০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। অন্য দিকে বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ১৮০টি আধুনিক মেশিন দরকার কিন্তু আছে মাত্র ১৯টি। ক্যান্সার চিকিৎসায় আমাদের অবশ্যই স্বনির্ভর হতে হবে। অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম বলেন, সবার জন্য সহজে চিকিৎসার জন্য শিগগির স্বাস্থ্যবীমা চালু করতে হবে।
অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, বাংলাদেশে ৫০ দশকেই ক্যান্সারে থেরাপির আধুনিক মেশিন আনলেও বাংলাদেশে বর্তমান ১৯ মেশিন আছে, যা খুবই দুঃখজনক। মেশিন ও বিশেষজ্ঞ দুই-ই লাগবে ক্যান্সার চিকিৎসায় এবং এই দুই ব্যাপারেই বাংলাদেশ এগোচ্ছে ধীরগতিতে।

 


আরো সংবাদ



premium cement