দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৩
দক্ষিণ কোরিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। মঙ্গলবার গভীর রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ওয়াইটিএনে দেয়া জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রয়টার্স ও আলজাজিরা।
এক টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইউন বলেন, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে উদার দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষায় এবং রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান নির্মূল করতে আমি জরুরি সামরিক আইন ঘোষণা করছি। তিনি আরো অভিযোগ করেন, জনগণের জীবন-জীবিকার তোয়াক্কা না করে বিরোধী দল কেবল অভিশংসন, বিশেষ তদন্ত এবং তাদের নেতাকে বিচার থেকে রক্ষা করার জন্য শাসনব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়েছে।
ইউনের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন তার পিপল পাওয়ার পার্টি এবং প্রধান বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি পরবর্তী বছরের বাজেট বিল নিয়ে তীব্র বিরোধে লিপ্ত। বিরোধী এমপিরা গত সপ্তাহে পার্লামেন্টারি কমিটির মাধ্যমে একটি উল্লেখযোগ্যভাবে কাটাছাঁটা বাজেট পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। ইউন বলেন, আমাদের পার্লামেন্ট এখন অপরাধীদের জন্য আশ্রয়স্থল হয়ে গেছে। এটি একটি আইন প্রণয়নের স্বৈরতান্ত্রিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, যা আমাদের উদার গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা উল্টে দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রেসিডেন্ট বিরোধী আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তারা রাষ্ট্রের প্রধান কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য সব বাজেট ছেঁটে ফেলেছেন। তিনি বলেন, মাদক অপরাধ মোকাবেলা এবং জননিরাপত্তা বজায় রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর বাজেট কাটছাঁট করে দেশকে মাদকের অভয়ারণ্য এবং জননিরাপত্তাহীনতার অবস্থায় পরিণত করা হয়েছে। ইউন বিরোধী দলকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং তাদের উদ্দেশ্যকে ‘শাসনব্যবস্থা পাল্টে দেয়া’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি যত দ্রুত সম্ভব রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি নির্মূল করে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনব।
যদিও পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত চিরবৈরী প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এই সামরিক আইন জারি করা হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে ভাষণে কিছু জানাননি ইউন সুক-ইওল। তবে সামরিক আইন জারির পেছনে দক্ষিণ কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি।
আকস্মিক এই সামরিক আইন জারির ঘোষণায় দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশটির ইতিহাসের গোড়ার দিকে একাধিক কর্তৃত্ববাদী নেতা এই পথে হেঁটেছিলেন। তবে ১৯৮০-এর দশক থেকে গণতান্ত্রিক পথে যাত্রা করে দেশটি। সম্প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ওনের মানের ব্যাপক পতন ঘটেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন জারির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে হোয়াইট হাউজ সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তবে শাসক রক্ষণশীল দল পিপল পাওয়ার পার্টির নেতা হান ডং-হুন এই সিদ্ধান্তকে ভুল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, সামরিক আইন ঘোষণার বিরোধিতা করব এবং জনগণের সাথে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবো। অন্যদিকে, বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এই ঘোষণার পরপরই জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে।
২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টের সাথে ইউনের মতবিরোধ চলে আসছে। বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং শাসক পিপল পাওয়ার পার্টির মধ্যে আগামী বছরের বাজেট বিল নিয়ে চলমান অচলাবস্থা আরো উত্তেজনা তৈরি করেছে।
এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ইউন বলেন, জাতীয় পরিষদ রাষ্ট্রের প্রধান কার্যক্রম, মাদক অপরাধ প্রতিরোধ এবং জননিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। এতে জনগণ অস্থিতিশীল অবস্থায় পড়েছে, রাষ্ট্রের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং দেশটি মাদকের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ইউনের স্ত্রী এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এ বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউন। এর ফলে বিরোধী দলের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। এ অবস্থায় সামরিক আইন জারির এই পদক্ষেপ দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।