কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ
- ক্রীড়া প্রতিবেদক
- ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:৫৪
আগের দিনের দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ দ্বিতীয় দিন দূর করেছেন জাস্টিন গ্রিভস। ডান হাতি এই ব্যাটারের অপরাজিত ১১৫ রানের সুবাদে ৪৫০ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। মিরাজ বাহিনী জোড়া উইকেট হারিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষে ৪০ রান করেছিল। গতকাল তৃতীয় দিনে তার সাথে মাত্র ৮ রান যোগ করে রোচের বলে হজকে ক্যাচ দিয়ে বিচ্ছিন্ন হন শাহাদাত হোসেন দিপু। ৭১ বলে এক বাউন্ডারিতে করেন ১৮ রান। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে ২১ তম ফিফটি করার পরে বলেই সিলসির বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়েছেন মুমিনুল হক। আর সম্ভাবনা জাগিয়েও আরেকবার হতাশ করেছেন লিটন দাস। ৭৬ বলে ৪০ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৬২ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪৫ রান। অধিনায়ক মেহেদী মিরাজ ৭ রানে এবং জাকের আলী ০ রানে অপরাজিত ছিলেন। তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে ২৫ ওভারে ৬৫ রানে একটি উইকেটের পতন হয়। তবে লাঞ্চের পর মুমিনুল হক ও লিটন দাসের উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
৪৫০ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস ঘোষণার পর ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দেখেশোনেই করেছিলেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। ইনিংসের অষ্টম ওভার পর্যন্ত কোন বাউন্ডারিই আসেনি তাদের ব্যাট থেকে। ধীরগতির শুরুর পর ধীরে ধীরে রান বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন জাকির। তবে আলজারি যোসেফের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল অনায়াসেই ছেড়ে দিতে পারতেন জয়। তা না করে আলতো করে ব্যাট পেতে দিয়ে গালিতে দেন ক্যাচ। তার ভাগ্য ভালো সেটি মুঠোয় নিতে পারেননি মিকাইল লুইস। তখন ৫ রানে ছিলেন জয়। পরের ওভারেই জেডন সিয়ালসকে দু’টি বাউন্ডারি হাঁকালেও নবম ওভারের শেষ বলে বাউন্স ও গতিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন জাকির। ৩৪ বলে ১৫ রান করেন এই ওপেনার। পরের ওভারে আলজারি জোসেফের দারুণ এক ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ৩৩ বলে পাঁচ রান করে ফিরেন জয়।
এরপর মুমিনুল হক ও শাহাদাত হোসেন দিপু দু’জন মিলে দেখেশোনে খেলে কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেন। দুই উইকেট হারিয়ে ৪০ রান নিয়ে দিন শেষ করে মিরাজ বাহিনী। গতকাল ৪১০ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নেমেছেন আগেরদিন সাত রানে অপরাজিত থাকা মুমিনুল হক ও ১০ রানে অপরাজিত থাকা শাহাদাত হোসেন দিপু। ধীরলয়েই এগোচ্ছিলেন দুই ব্যাটার। ৩২.২ ওভারে বিচ্ছিন্ন হন দিপু। রোচের বলে হজকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। তার আগে করতে পারেন ৭১ বলে এক বাউন্ডারিতে ১৮ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস : মিকাইল লুইস এবং অ্যালিক আথানেজে সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নিয়ে প্রথম দিন ডাগআউটে ফিরেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দিন নিজের করে নিয়েছেন জাস্টিন গ্রিভস। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানোর দিন এই ব্যাটারের কল্যাণে স্বাগতিকরা স্কোরবোর্ডে ৯ উইকেটে ৪৫০ রান তোলার পর ইনিংস ঘোষণা করে।
দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে নামলে জশুয়া সিলভাকে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি হাসান মাহমুদ। দারুণ এক ইন সুইঙ্গারে এই উইকেটকিপার ব্যাটারকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। এরপর রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি সিলভা। এরপর হাসান নিজের দ্বিতীয় ওভারে সাজঘরে ফেরান আরেক ক্যারিবীয় ব্যাটার আলজারি জোসেফকে। হাসানের বলে লেগ সাইডে পুশ করতে চেয়েছিলেন জোসেফ। মাত্র চার রান করে ফিরে যেতে হয় এই ক্যারিবীয় ব্যাটারকে।
শুরুর ধাক্কা বেশ ভালোভাবেই সামাল দেন গ্রিভস ও কেমার রোচ। দু’জনে মিলে উইন্ডিজের রান ৩০০ পার করেন। অবশ্য শূন্য রানেই আম্পায়ার্স কলের কারণে জীবন পেয়েছিলেন রোচ। হাসানের দ্রুত গতির ডেলিভারির বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পেয়ে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন রোচ। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকমতো করতে পারেননি। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। বাংলাদেশ রিভিউ নিলে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পের বাইরের দিকে লাগত। ফলে জীবন পান রোচ।
২০২২ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ ৩০০ ছোঁয়া দলীয় ইনিংস পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতকাল ফের ৩০০ রানের দেখা পেল দলটি। তবে মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটি ভাঙার সুযোগ এলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। কট বিহাইন্ডের রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। ১১৯তম ওভারে তাসকিনের দ্বিতীয় ডেলিভারি গ্রিভসের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে জাকের আলির গ্লাভসে। কিন্তু বদলি উইকেটরক্ষক কিংবা মাঠের অন্য কোনো ফিল্ডাররা সেটি টেরই পায়নি। তিন বল পর রিপ্লেতে দেখা যায়, বেশ ভালোভাবে ব্যাটের কানা ছুঁয়েছিল বল। কিন্তু রিভিউ না নেয়ায় বিপদ ঘটেনি ৭৭ রানে থাকা গ্রিভসের। এমন হতাশার পর রোচ-গ্রিভস জুটি পৌঁছে যায় শত রানে।
৪৭ রানে থাকা রোচকে বোল্ড করে থামান হাসান মাহমুদ। অব স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা বলের লাইনে যেতে পারেননি রোচ। মিডল স্টাম্পের চূড়ায় আঘাত হানে বল। ভাঙে ২৮৯ বলে ১৪০ রানের জুটি। এরপর লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে দারুণ ব্যাটিং করা জাস্টিন গ্রিভস তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। আগের দিন মিকাইল লুই ও আলিক আথানেজ ৯০-এর ঘরে ফিরেছিলেন। তাদের ভুলের পুনরাবৃত্তি করেননি গ্রিভস। ৯৮ থেকে তাইজুল ইসলামকে চার মেরে তিন অঙ্কে পৌঁছান তিনি। ১৮১ বলে সেঞ্চুরি করতে কেবল চারটি বাউন্ডারি মেরেছেন গ্রিভস। দলকে সাড়ে ৪০০-এর ঘরে নিয়ে যেতেই ইনিংস ঘোষণা করেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক গ্রেইগ ব্রাফেট। ১১৫ রানে অপরাজিত থাকেন গ্রিভস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : (তৃতীয় দিন চলমান)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস : ১৪৪.১ ওভারে ৪৫০/৯ (ব্র্যাথওয়েট ৪, লুইস ৯৭, কার্টি ০, হজ ২৫, আথানেজ ৯০, গ্রিভস ২৮*, ডা সিলভা ১৪, আলজারি ৪, গ্রিভস ১১৫*, রোচ ৪৭, সেয়ালস ১৮, শামার ১১*; হাসান ৩/৮৭, শরিফুল ০/৫৩, তাসকিন ২/৭৬, তাইজুল ১/১১১, মিরাজ ২/৯৯)।
বাংলাদেশ ইনিংস : ৬২ ওভারে ১৪৫/৫ (মাহমুদুল হাসান জয় ৫, জাকির হাসান ১৫, মুমিনুল হক ৫০, শাহাদাত হোসেন ১৮, লিটন দাস ৪০, মিরাজ ৭*, জাকের ০* সিলস ২/৩১, আলজারি ১/৩৬, রোচ ১/১৭), সামার জোসেফ ১/৪০।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা