শিশুর প্রতি এ কেমন নৃশংসতা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭
টানাটানির সংসারের হাল ধরতে প্রতি দিনের মতো জীবিকার উদ্দেশ্যে গতকাল সকালে ও ২ শিশু সন্তানকে নাস্তা করিয়ে তাদের বাবার কাছে রেখে যান রোজিনা বেগম। কিন্ত বেলা ১১টায় হঠাৎ খবর পান তার নাড়ি ছেঁড়া দুই শিশু সন্তান পৃথীবিতে নেই। বাবা জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তাদের। বাসায় এসে দেখেন সকালে যে দুই ছেলেকে হাঁসি-খুশিতে রেখে গিয়েছিলেন, তাদের রক্তের ছোপ মেঝেতে ছড়িয়ে আছে। তখনও দুই ছেলের গলা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এই দৃশ্য দেখে প্রতিবেশী ও পুলিশের সহযোগিতায় তিনজনকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা দুই ছেলে রেহান (৭) ও মুসাকে (৩) মৃত ঘোষণা করেন। তাদের বাবা মো: আহাদ মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে আহাদ মিয়া সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গতকাল শনিবার সকালে পল্লবী ব্যাপারীপাড়া এলাকার একটি বাড়ির নিচতলায় এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় আহাদের স্ত্রী বাসায় ছিলেন না। ঋণগ্রস্ত হওয়ার হতাশা থেকে সন্তানদের হত্যার পর নিজেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন আহাদ। ঘটনার আগেও স্বজনদের ফোনে জানিয়েছিলেন, ঋণের চাপ ও সাংসারিক ঝামেলায় আর বাঁচতে চান না।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, আহাদ মিয়ার অভাব-অনটন লেগে থাকলেও তিনি ৪ থেকে ৫টি বিয়ে করেছেন। রোজিনা বেগমকে ৭ বছর আগে বিয়ে করেন। এর আগেও রোজিনার বিয়ে হয়েছিল। এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে। আগের স্বামীর ঘরে রোজিনার এক সন্তান রয়েছে। আহাদ-রোজিনা দম্পতির ২ ছেলে। তাদের নিয়েই অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
ওই সূত্র আরও জানায়, আহাদ মিয়া ঋণগ্রস্ত হওয়ায় হতাশা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে হতাশা থেকেই তার নিজের অবুঝ দুই সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যার পর নিজেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
ঢামেক হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আহাদ মিয়ার শ্বাসনালী কেটে গেছে। তার গলায় অপারেশন চলছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহাদের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায়।
ঘটনার বিষয়ে পল্লবী থানার এসআই সোহান মোল্লা জানান, গতকাল সকালে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দুই শিশুর দেহ আর ঘাতক বাবাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক দুই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। আর মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের বাবাকে চিকিৎসার জন্য ঢামেকে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নিহত দুই শিশুর বাবা আহাদ মিয়া রিকশা চালানোর পাশাপাশি নিরাপত্তারক্ষীর কাজসহ যখন যেটা পেতেন সেটাই করেন। গতকাল সকালে তিনি (আহাদ) তার মাকে ফোন দিয়ে বলেন, তার মানসিক অবস্থা ভালো না। দেনা-পাওনা ও সাংসারিক কারণে খুবই চাপে আছেন। তাই আর বাঁচতে চান না। ঘটনার সময় শিশু দুটির মা বাইরে ছিলেন, অন্যের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশুর মা কাজে বের হওয়ার পর দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজের গলায় ছুরি চালিয়েছেন বাবা। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
নিহত দুই শিশুর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা