গাড়ি থাকে বাড়িতে, জ্বালানি খরচ ওভার টাইম অফিস থেকে
- শেখ আজিজুল হক গাজীপুর মহানগর
- ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২১
ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়মিত জ্বালানি খরচ ও মোটা অঙ্কের ওভার টাইমের বিল উত্তোলন করেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) টঙ্গীতে কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারের উপ-পরিচালক পান্না কুমার ঘোষ। রহস্যজনক কারণে ব্যক্তিগত পছন্দের একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীকে একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিন যাবৎ নিজের সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন না কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার (সিএসডি)-এর উপ-পরিচালক পান্না কুমার ঘোষ। অফিসের সরকারি গাড়ি নিজের বাসায় রেখে পরিবারের কাজে ব্যবহার করছেন। অথচ তিনি প্রতি মাসে প্রায় ১২ হাজার টাকার গ্যাস, সাড়ে তিন হাজার টাকার তেলের বিল ও সরকারি গাড়িচালকের গড়ে ১০০ ঘণ্টার ওভার টাইমের বিল উত্তোলন করছেন। বিগত দুই-তিন মাসে অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তার অফিসে গাড়ি ব্যবহার না করার প্রমাণ মিলবে বলেও সূত্রের দাবি।
এ দিকে পান্না কুমার ঘোষ তার আশীর্বাদপুষ্ট তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ভাণ্ডাররক্ষক ‘বি’ মিজানুর রহমানকে একই সাথে ভাণ্ডার কর্মকর্তা (রিসিভ) ও সহকারী পরিচালক (নিরাপত্তা)-এর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়েছেন। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন কর্মকর্তা (উপ-সহকারী প্রকৌশলী) থাকলেও তাকে নিরাপত্তা বিভাগের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। অপর দিকে সিএসডির ভাণ্ডার কর্মকর্তা (ইস্যু) একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা। তাকেও ভাণ্ডার কর্মকর্তা (রিসিভ)-এর দায়িত্ব না দিয়ে এ কাজ করানো হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী মিজানুর রহমানকে দিয়ে। নিরাপত্তা পরিদর্শক তাহমিনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে তার চাকরি কনফার্মেশনের কাজটিও করেছেন পান্না কুমার ঘোষ।
জানা গেছে, পান্না কুমার ঘোষ দায়িত্বে থাকাবস্থায় ভাণ্ডারে একাধিক রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক ‘কারেন্ট ট্রান্সফর্মার’ (সিটি) ভস্মীভূত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এসব ‘সিটি’ দেশের বিভিন্ন সাবস্টেশনের জন্য চীন থেকে আমদানি করা হয়েছিল, যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ৯০০ ডলার। দেশে করোনা শুরুর আগে টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে আরো একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও রহস্যজনক কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবাস্তব রিসিভে ইন্সপেকশন (আরএ-আই) প্রক্রিয়া জায়েজ করতেই এসব রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড ও চুরির ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অপর দিকে ভাণ্ডারে রক্ষিত শত শত ‘পটেনশিয়াল ট্রান্সফর্মার (পিটি)-এর কানেকটর-সহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ ইতঃপূর্বে রহস্যজনকভাবে চুরি হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাণ্ডারে রক্ষিত পিডিবির ওয়াকিটকির প্রায় ২০ হাজার ব্যাটারির কোনো হদিস নেই। মালামাল স্থানান্তর ও গোছানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নামে প্রতি মাসে অজ্ঞাত-অপরিচিত ব্যক্তিদের নামে কাঁচা ভাউচারে (কম্পিউটারে টাইপ করা ভাউচার) ভুয়া লেবার বিল এবং দাফতরিক কাজের জন্য বিভিন্ন দোকানের নামে মালামাল ক্রয়ের তুয়া বিল-ভাউচারে লাখ লাখ টাকা তসরুফেরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
নিয়ম-নীতি ও ভাণ্ডারের নিরাপত্তার দিক বিবেচনা না করেই ভাণ্ডার অভ্যন্তরে সম্প্রতি রেস্টহাউজ (বাংলো) নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পিডিবির কর্মকর্তারা ছাড়াও মালামাল স্থানান্তরের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার ও তাদের কর্মীরাও ভাণ্ডারের ভেতরর ওই বাংলোতে অবস্থান করেন। সরকারি ছুটির দিন যখন ভাণ্ডারে কেউ থাকেন না তখনো বহিরাগতরা বাংলোতে থাকার সুবাদে অবাধে ভাণ্ডারের ভেতর ঘুরে বেড়ান। এতে মূল্যবান মালামাল বেহাত হওয়ার আশঙ্কা ভাণ্ডারের নিরাপত্তারক্ষীদের।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল সোমবার একাধিকবার ফোন দেয়া হলে পান্না কুমার ঘোষ প্রতিবারই ফোন কেটে দেন।
উল্লেখ্য, সারা দেশে পিডিবির মোট চারটি কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারের মধ্যে টঙ্গীর ভাণ্ডারটি সবচেয়ে বড় ও বর্তমানে পুরোপুরি সচল। ইতোমধ্যে খুলনা ও ঈশ্বরদীর কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার বন্ধ হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার বর্তমানে আংশিক চালু।