১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির নির্বাচন নিয়ে ২ পক্ষ মুখোমুখি

নির্বাচন স্থগিতে আইনি নোটিশ
-


বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়েছে। একটি পক্ষ আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে গঠিত নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। অন্য পক্ষ গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, গত ১০ আগস্ট ডেন্টাল সোসাইটির সদস্যদের একটি অংশ সোসাইটির মহাসচিব ডা: হুমায়ুন কবীর বুলবুলকে ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করে। একই দিন ডেন্টাল সোসাইটির ওই অংশটিই সভাপতি অধ্যাপক ডা: আবুল কাসেমের চেম্বারে গিয়ে তাকে জোর পূর্বক কার্যকরী পরিষদ, জেলা শাখা এবং উপকমিটি বিলুপ্তি ও নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে হাতে লেখা প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ উঠেছে। সভাপতি তিন সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করতে বাধ্য হন। ঘোষিত নির্বাচন কমিশনাররা হলেন, অধ্যাপক ডা: এস এম সালাহউদ্দিন আল আজাদ, ডা: এস এম তানভীর ইসলাম ও ডা: সিফাতউদ্দীন খান।

সাধারণ সদস্যরা সোসাইটির গঠনতন্ত্র উদ্ধৃত করে জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী (ধারা ১৮.১) কার্যকরী পরিষদ তার উত্তরাধিকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত স্বীয় দায়িত্বে বহাল থাকবে। ফলে মহাসচিব ও কার্যকরী পরিষদ বিলুপ্তির জোরপূর্বক ঘোষণায় ডেন্টাল সোসাইটির সদস্যদের একটি অংশ বিক্ষুব্ধ হয়েছে। তাদের দাবি সবকিছু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোনো কারণে সভাপতি পদত্যাগ করলে এবং তাতে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্মত হলে তখন সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন সহসভাপতি। এ ক্ষেত্রে সভাপতি পদত্যাগ করে থাকলেও সহসভাপতিকে দায়িত্ব না দিয়ে ডেন্টাল সোসাইটির সংবিধান ভঙ্গ হয়েছে বলে সাধারণ সদস্যরা দাবি করেছেন। গঠনতন্ত্রের ধারা অনুয়ায়ী (১৯ এর ৩) তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন না হলে পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশনই নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন কিন্তু সেক্ষেত্রে কার্যকরী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কাউন্সিল বা সাধারণ পরিষদের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাশেম বর্তমান নির্বাচন কমিশন অনুমোদনের এখতিয়ারই রাখেন না কিন্তু তাকে দিয়ে জোরপূর্বক একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

শুধু তাই নয় বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিধিবহির্ভূত ভাবে ৫০০ টাকা চাঁদার বিনিময়ে সদস্য সংগ্রহের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে যা গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে সদস্যরা দাবি করেছেন। গঠনতন্ত্রের ৫(১) ধারা অনুয়ায়ী কাউকে সোসাইটির সদস্য হিসেবে অনুমোদন দিতে পারে কেবল কেন্দ্রীয় পরিষদ, নির্বাচন কমিশন নয়।
বিক্ষুব্ধ সদস্যরা বলছেন, ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামী ৩০ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হলেও ১ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয় যাতে সোসাইটির অনেক সদস্য আপত্তি জানিয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটার হওয়ার ব্যাপারে সাধারণ সদস্যরা বলছেন, বর্তমান নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী কোনো প্রার্থী ৩০ অক্টোবরের আগে জানতেই পারবেন না যে তিনি প্রার্থী হতে পেরেছেন কিন্তু এর একদিন পরই নির্বাচন। প্রার্থী যদি জানতেই না পারেন যে তিনি ভোটার হতে পেরেছেন তাহলে তিনি নির্বাচনী প্রচার চালাবেন কী করে? এখানে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি রাখা হয়েছে এবং এটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায় বলে জানিয়েছেন ডেন্টাল সোসাইটির অনেক ভোটার ও প্রার্থী।
এদিকে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ সাদিক বিডিএসের আসন্ন নির্বাচন স্থগিত এবং গত ১০ আগস্ট গঠিত নির্বাচন কমিশন বাতিলে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ডেন্টাল সোসাইটির বর্তমান কার্যক্রম পেশাগত ঐক্যের জন্য বাধা এবং ৫ আগস্টের চেতনার বিপরীত।’ এনডিএফের অফিস সেক্রেটারি ডা: মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এনডিএফ বলেছে, ডেন্টাল সোসাইটির নির্বাচনে পেশার জ্যেষ্ঠ ও প্রখ্যাত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে সর্বসম্মতিক্রমে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে সদস্য সংগ্রহ বন্ধ থাকায় এবারের মতো ফি ছাড়াই সবাইকে ভোটার ঘোষণা করা; দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরপেক্ষ ভেনুতে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেন ভোটার ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৫ সালে। নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ তিন বছর নির্ধারিত থাকায় ২০১৮ সালে স্বাভাবিকভাবেই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলে আর কোনো নির্বাচন হয়নি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ডা: এস এম সালাহউদ্দিন আল আজাদ, সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ডা: এস এম সালাহউদ্দিন আল আজাদ নয়া দিগন্তের কাছে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সামনে নির্বাচন গঠনতন্ত্র অনুসারে হচ্ছে, গঠনতন্ত্রের ধারা ভঙ্গ করে কোনো কিছু হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন বাতিল করে অধ্যাপক ডা: আবুল কাশেম যে নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন সেটাও সঠিক হয়নি। তিনি বর্তমানে বয়সের ভারে নুব্জ্য, অনেক কিছুই মনে রাখতে পারেন না বলে নির্বাচন কমিশন বাতিলের বিজ্ঞপ্তিটি কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দিয়েছেন, পরে তিনি ভুল বুঝতে পেরেছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement