১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

পলিথিনের পর্যাপ্ত বিকল্প না থাকায় ভোগান্তি

-

পলিথিনের বিকল্প ব্যাগের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। বিশেষ করে সুপার শপগুলোকে ব্যাগ না থাকায় কাঁচা মাছ-গোশত নিতে হচ্ছে কাগজের ব্যাগে। যা কিছু সময়ের মধ্যে রক্ত-পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে ক্রেতার শরীরও। আবার ৫ থেকে ১০ কেজিও দেয়া হচ্ছে ওই কাগজের ব্যাগে। যা রিকশায় তুলতেই ছিড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিক্রেতারা বলছেন, পলিথিনের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ব্যাগের পর্যাপ্ত সরবরাহ পাচ্ছেন না। যার কারণে তারাও বিব্রত অবস্থায় পড়ছেন।
ক্রেতারা বলছেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে এটা খুবই ভালো। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা তো থাকতে হবে। এত বছর সুপার শপগুলোতে শুধু টাকা নিয়ে এসেছেন। ট্রলি নিয়ে ঘুরে ঘুরে বাজার করে টাকা দিয়েছেন। সেলসম্যানরাই সেগুলো সুন্দর করে ব্যাগে ভরে দিয়েছেন। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ উল্টো অভিজ্ঞতায় পড়তে হচ্ছে। দ্রুতই এর সমাধান হওয়া উচিত।
চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে সুপার শপগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। যার কারণে স্বপ্ন, আগোরা, মিনাবাজারসহ অন্য সুপার শপগুলোতে পলিথিন বা ওই জাতীয় সব ধরনের ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। বিকল্প হিসাবে পাটের তৈরি বা পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সাইজের ব্যাগ টাকার বিনিময়ে বিক্রির সাইনবোর্ড দেয়া রয়েছে। ৮ টাকা থেকে শুরু করে ১২ বা ১৬ টাকা পর্যন্ত দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতেও ক্রেতাদের খুব বেশি আপত্তি ছিল না। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেছে সাইনবোর্ড থাকলেও ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে বাধ্য হয়ে কাগজের ব্যাগে বাজার নিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
গত মঙ্গলবার স্বপ্ন শেওড়াপাড়া আউটলেটে বাজার করতে যান স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন ও তার স্ত্রী। যথারীতি ট্রলি নিয়ে প্রথমে যান চাউলের কাছে। ১০ কেজি চাল চাইলে সেলসম্যান ব্রাউন কালারের বড় একটি কাগজের ব্যাগ বা ঠোংগা নিয়ে আসেন। তাতে চাল ভরতে শুরু করলে আল আমিন জানতে চান এই ব্যাগ কেন। সেলসম্যান বলেন, স্যার পলিথিন বা ওই জাতীয় সব ধরনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। বিকল্প কী আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চটের ব্যাগ রয়েছে যেটা আপনাকে টাকা দিয়ে কিনতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই মুহূর্তে আমাদের চটের ব্যাগও শেষ হয়ে গেছে। তাই আপনাকে কাগজের ব্যাগেই নিতে হবে। অথবা বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আসতে হবে। আমরা অপারগ স্যার। ১০ কেজি চাল কাগজের ব্যাগে ভরে ট্রলিতে তুলতে ছিদ্র হয়ে যায়। পরে বাধ্য হয়ে ৫ কেজি চাউল কিনেন তিনি।
একই সময়ে মাছুমা জামান কেনেন মাছ। তা কেটে একটি ব্যাগে ধরিয়ে দেয়া হয় তাকে। কিছু সময় পরই কাগজের ব্যাগ ভিজে রক্ত-পানি গড়াতে শুরু করে। নষ্ট হয় তার শরীর ও কাপড়। অনেক ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, এটা কী শুরু হলো। কাগজের ব্যাগে মাছ নেয়া যায়। তা ছাড়া এই মাছ নিয়ে ফ্রিজে রাখবো কিভাবে। এর একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন। কাজীপাড়া আগোরা থেকে বের হওয়ায় আরিফ হোসেন বলেন, বাজার করতে এসেছিলাম। কিন্তু বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আসিনি। এদের কাছে ব্যাগের সরবরাহ নেই। সকালে যেগুলো পেয়েছিল, দুপুর গড়াতে তা নাকি শেষ হয়ে গেছে। ব্যাগ না থাকায় বাজার না করেই চলে যাচ্ছি।
জানতে চাইলে স্বপ্ন আউটলেটের এক সেলসম্যান বলেন, ঊর্ধ্বতনরা পর্যাপ্ত পরিবেশবান্ধব ব্যাগ সরবরাহের চেষ্টা করছেন। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো এই ব্যাগ তৈরি করে বাজারজাত করে তারা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছে না।
স্বপ্নর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসরি বলনে, আমরাও ভাবছিলাম সাউথইস্ট এশিয়ার একমাত্র গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফাইড রিটেইল চেইনকে কিভাবে প্লাস্টিকমুক্ত করা যায়। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়রে উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসনেসহ মন্ত্রণালয়ের সবাইকে এই মহতি উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পর্যান্ত ব্যাগ না থাকায় ক্রেতাদের সাময়িক অসুবিধা হলেও এটি থাকবে না। কেউ বাসা থেকে ব্যাগ না আনতে পারলে স্টোর স্বপ্ন থেকে ক্রয় করে নিতে পারবেন।


আরো সংবাদ



premium cement