১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
বৈষম্যবিরোধী-বীরত্বগাথা

স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি পৌঁছে চিরতরে হারিয়ে গেলেন ওমর

-

বিমান প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল ওমরের। স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঘাতক বুলেট সব তছনছ করে দিলো তার। পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেলেন ওমর।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয় মিছিল থেকে ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) মেধাবী ছাত্র ওমর বিন নূরুল আবছার (২৪) বোয়ালখালী উপজেলার আকুবদন্ডী ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী দেলোয়ার হোসেন সওদাগর বাড়ির মো: নুরুল আবছার (৫৫) ও রুবি আখতার (৪৪) দম্পতির ছেলে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে ওমর তৃতীয়।
শহীদ ওমরের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন ওমর। বন্ধুদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিদিনই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। আন্দোলনে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে বন্ধুদের সাথে ছিলেন। ১৮ জুলাই পুলিশের টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেটের আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু বুলেটের সে ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আবারো রাজপথে নেমে আসেন। তার সেই ত্যাগ সফল হলো। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর বন্ধুদের সাথে আনন্দ মিছিলেরও আয়োজন করেন তিনি। কিন্তু ঘাতক বুলেট তার সেই আনন্দ চিরতরে কেড়ে নিয়েছে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ঢাকার উত্তরায় আনন্দ মিছিল শেষে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ওমর। ওমরের এমন চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবার ও সহপাঠীরা।
ওমরের স্বপ্ন ছিল বিমান প্রকৌশলী হবেন। তার মা-বাবাও এই স্বপ্নের পথে হাঁটতে ছেলেকে সাধ্যমতো সহায়তা করেছেন। স্বপ্ন পূরণে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েও ওমরের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। ঢাকার সাভারের উত্তরা সেক্টর ১৪/১৮ নাম্বার রোডে বন্ধুদের সাথে ভাড়া বাসায় থাকতেন ওমর। সেখান থেকে বিএটিসিতে পড়াশুনা করছিলেন। তিন বছরের কোর্সের ১৩টি মডিউলের ১২টি মডিউল শেষ করেছিলেন ওমর। এরই মধ্যে পেয়েছিলেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে কাজ করার সুযোগও। ছোট বেলা থেকেই নানামুখী আবিষ্কারের প্রতিভা ছিল তার। কিন্তু ঘাতক বুলেট কেড়ে নিয়েছে সবার স্বপ্ন।
ওমরের শোকস্তব্ধ মা রুবি আখতার বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরও কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। মনে মনে বারবার বলছিলাম, সংবাদটি যেন মিথ্যা হয়। কিন্তু পরক্ষণেই সবকিছু ওলটপালট করে দেয় আমার ছেলের লাশ। যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তারপরও আল্লাহর দিকে তাকিয়ে সব মেনে নিয়েছি। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। আজ সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।’
তিনি জানান, ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তার বাবা নূরুল আবছার দেশে ফিরে আসেন। তিনি ছেলেকে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। কোনোভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেন না। যে কয়দিন দেশে ছিলেন ছেলের তৈরি করা বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখে কান্না করতেন।
তিনি আরো বলেন, ‘ওমরের বাবা জীবনের বেশির ভাগ সময় প্রবাসে কাটিয়েছেন। খেয়ে না খেয়ে, নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সন্তানদের মানুষ করার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ঘাতক বুলেট আমাদের সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। আমার ছেলে এ দেশের সম্পদ। এ সম্পদকে যারা চিরতরে শেষ করে দিয়েছে আমি তাদের বিচার চাই। আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় সে বিচার দেখে যেতে চাই।’
পরিবারের পক্ষ থেকে জানায়, ওমরের বড় ভাই নূরুল হাসনাত রিফাত (২৬) শারীরিক প্রতিবন্ধী। আম্মার বিন নূরুল আবছার (১৯) নগরের বায়তুশ শরফ মাদরাসায় আলিম দ্বিতীয় বর্ষে এবং মোহাম্মদ বিন নূরুল আবছার (১৭) একই মাদরাসায় আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সবার ছোট আহমেদ বিন নূরুল আবছার (১৪) নগরের সিডিএ পাবলিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। সবার বড় বোন জান্নাতুল হুরাইন (২৮)। তার অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। শহীদ ওমরের বাবা মো: নূরুল আবছার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ওমরের পড়ালেখা শেষ হলে তিনিই সংসারের হাল ধরতেন। কিন্তু তিনি অকালেই ঝরে গেলেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে আরো জানায়, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শহীদ ওমরের পরিবারকে এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। তবে আর কেউ কোনো সহায়তা করেনি।


আরো সংবাদ



premium cement