১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ময়মনসিংহের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

-


ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় বন্যার পানি ধীরগতিতে নেমে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার নতুন করে আর কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির এখন উন্নতি হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে দুই-এক দিনের মধ্যে বন্যার পানি নেমে যাবে। এ দিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি কমলেও পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী না পৌঁছানোয় বানভাসিদের দুর্ভোগ কমছে না। অবশ্য জেলা প্রশাসন তিন উপজেলায় নগদ সাত লাখ টাকা ও ৬৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণের কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়াও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

বন্যাকবলিত এলাকায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট চলছে। ফলে পানিবাহিত রোগ ছাড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় বন্যার্তদের চিকিৎসার্থে মেডিক্যাল ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছে সেনাবাহিনী। গতকাল সদর দফতর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের ব্যবস্থাপনায় এবং ৪০৩ ব্যাটেল গ্রুপের আয়োজিত ক্যাম্পেইনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের মাধ্যমে হালুয়াঘাটের পাঁচ শতাধিক দরিদ্র ও দুস্থ ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যসেবায় বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া ৪০৩ ব্যাটেল গ্রুপ এক হাজার ৬০০ পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দিয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাদ্য, পানি, ওক্ষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে বন্যার্তদের পাশে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবহিনী। তিন উপজেলাতেই প্রশাসনের পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব।

হালুয়াঘাটে খাদ্যসঙ্কট চরমে
হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ষষ্ঠ দিনেও হালুয়াঘাটের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় কৈচাপুর, ধারা, ধুরাইল, স্বদেশী, নড়াইল, বিলডোরা, শাকুয়াই ও হালুয়াঘাট ইউনিয়নের কালিয়ানীকান্দা, বালিচান্দা, খন্দকপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় অর্ধলাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
বন্যার পানিতে ফসলি জমি, রাস্তা, মাঠ-ঘাট তলিয়ে গেছে। স্কুল, মাদরাসা, ঘরবাড়ির চার দিকে শুধু পানি আর পানি। বিভিন্ন পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে আছেন অনেকে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যসঙ্কট। ঘরের ভেতর পানি, রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে, অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে বহু মানুষ।

ধুরাইল ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের নয়পাড়া, বনপাড়া, ঝাউগরা, রামনগর, কন্যাপাড়া, ডুবারপাড়, চরগোকপুর, মোকামিয়ার লোকজন পানিবন্দী হওয়ায় চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থা দেখা গেছে। এ দিকে হালুয়াঘাটের পূর্ব-দক্ষিণাংশের খন্দকপাড়া, পূর্ব কালিয়ানিকান্দা, কাওয়ালীজান, উত্তর গোপীনগর, দক্ষিণ গোপীনগর, মহাজনীকান্দা, বটগাাছিয়াকান্দা, বাদশা বাজার, খরমা, বাদে খরমা, খামারবাসা, আলিশাহ বাজার, বোর্ড বাজার, চায়না মোড়, আতুয়াজঙ্গল, জৈনাটি, দারিয়াকান্দা, পলাশকান্দা, জামবিল ও তার আশপাশের গ্রামগুলো এবং শাকুয়াই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বন্যা পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল রয়েছে।

সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধারকার্যক্রম এখনো পরিচালনা করছে। এসব এলাকার সব সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উঁচু ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে মানুষ।
ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার অনেক রাস্তা এখনো পানির নিচে রয়েছে। দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নে রোববার থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নে পানি কমলেও গোয়াতলা ও ধোবাউড়া সদরের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। এসব এলাকায় পানিবন্দী হয়ে আছেন ৫৮ হাজার মানুষ। দুর্গতরা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কটে পড়েছেন। মুন্সিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রটিতে পৌঁছাতেও হাঁটুপানি মারাতে হচ্ছে। চারিয়াকান্দা, মুন্সিরহাট ফাজিল মাদরাসা ও মেকিয়ারকান্দা আশ্রয়কেন্দ্রে আরো পাঁচ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। মান্দালিয়া গ্রামের সাইদুল জানান, তার ঘরে এখনো পানি আছে। চার দিন ধরে রান্না হচ্ছে না।

শুকনো খাবার ও মানুষের দেয়া রান্না করা খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন। তার গরু-ছাগল এক কিলোমিটার দূরে মুন্সিরহাট বাজারে বেঁধে রাখা হয়েছে।
ফুলপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ফুলপুরের ছনধরা, সিংহেশ্বর ও ফুলপুর সদরে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বালিয়া ও রূপসী ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩৫টি গ্রামের অন্তত ২৪ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী রয়েছেন। পোগাপুটিয়া গ্রামের চাষি সমশের আলী (৭০) বলেন, ‘পানি কমতাছে অল্প অল্প। এইরম বন্যা ছোডু বালায় দেখছি।’

 


আরো সংবাদ



premium cement