০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

কম ভিসা, বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফ্লাইট নেমেছে অর্ধেকে

-


আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতগামী ফ্লাইটের সংখ্যাও কমে অর্ধেকে নেমেছে। এ দিকে ইউরোপের অনেক দেশের দূতাবাস ভারতে থাকায় সঙ্কটে পড়ছেন ইউরোপে পড়তে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া চিকিৎসার জন্য ভিসা পেতেও হিমশিম খাচ্ছেন আবেদনকারীরা। সীমিত ভিসা দেয়ায় প্রভাব পড়ছে এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও।
বাংলাদেশের তিনটি বিমান সংস্থা নভোএয়ার, ইউএস বাংলা ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মধ্যে দুইটি বিমান সংস্থার ফ্লাইট কমে অর্ধেকে নেমেছে, আর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে একটির। পাঁচ আগস্টের আগে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-চেন্নাই ও চট্টগ্রাম-কলকাতা এই তিনটি রুটে সপ্তাহে মোট ৩২টি বিমান পরিচালনা করত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে দুইটি রুটে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে। আর পুরোপুরি বন্ধ আছে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বিমান চলাচল।
একই অবস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। আগে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-চেন্নাই ও ঢাকা-দিল্লি রুটে সপ্তাহে ২৮টি ফ্লাইট পরিচালিত হলেও বর্তমানে চলছে মাত্র ১৩টি ফ্লাইট। আর পুরোপুরি বন্ধ আছে কেবল ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী নভোএয়ারের ফ্লাইট।
সঙ্কটে ইউরোপে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা : ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বাংলাদেশী কোনো শিক্ষার্থীকে ইউরোপের দেশগুলোতে পড়তে যেতে হলে ভারতে গিয়ে সেই দেশের দূতাবাস থেকে দেশটির ভিসা সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ৫ আগস্টের দুই দিন পর থেকে ভারতীয় দূতাবাস ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রাখে। প্রায় এক সপ্তাহ পর দেশটি ‘সীমিত আকারে’ ভিসার কাজ চালু করে। সাধারণত কূটনৈতিক, ব্যবসায়ী ও ভ্রমণসহ ১৫টি ক্যাটাগরিতে ভারত বাংলাদেশকে ভিসা দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কেবল শিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসার জন্য ভিসা আবেদন করা যাচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ভিসা আবেদনকারীদের।

ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় পড়তে যাওয়ার জন্য অফার লেটার পেয়েছেন কাজী কানিজ রাতুল। ভারতের ট্যুরিস্ট বা ভ্রমণ ভিসার জন্য দুইবার আবেদন করেন। কিন্তু কোনোবারই তাকে ভিসা দেয়া হয়নি। পরে অফার লেটার পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তিনি ডাবল এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করেন। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত আমি প্রতিদিন ট্রাই করেছি। কিন্তু দেখা গেছে তাদের সার্ভার সবসময় ডাউন থাকে, স্লট পাওয়া যায় না। অন্য দিকে ভারতীয় ভিসা না পাওয়ায় রোমানিয়ায় পড়তে যাওয়ার জন্য অফার লেটার পাওয়া ৩৫০-এর মতো শিক্ষার্থী রোমানিয়ার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছেন। তাদের প্রায় সবারই টিউশন ফি জমা হয়ে গেছে। আমাদের ভিসা ক্যান্সেল হয়েছে এবং রোমানিয়ার ভিসা আমরা পাইনি। সেই কাগজপত্র যদি দেখাতে না পারি, সেটা কিন্তু রিফান্ড হবে না।
পর্যটন ব্যবসায় ধস : রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এশিয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের কর্ণধার ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আগে যেখানে কেবল ভারতের জন্য মাসে ১২০০-১৫০০ ফাইল রেডি করা হতো, সেখানে গত এক মাসে ‘ইমার্জেন্সি কেসের’ মাত্র ১০০টি ফাইল রেডি করা গেছে।’ আর সাবমিট করতে পেরেছেন কেবল আট থেকে ১০টি ফাইল। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্লট খোলার কারণে সবাই একসাথে তাতে ঢোকার চেষ্টা করায় সার্ভার ডাউন থাকে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।
প্রভাব পড়েছে ভারতের স্থানীয় ব্যবসায় : ট্যুরিস্ট ভিসা না থাকায় ব্যবসায় প্রভাব পড়ছে বলে জানাচ্ছিলেন কলকাতার ব্যবসায়ী মো: কামরুদ্দিন মল্লিক। তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ ২০ পারসেন্ট আসছেন এখন, ৮০ পারসেন্ট ট্যুরিস্ট নেই। যারা আসছেন তারাও মেডিক্যালের কাজ করে চলে যাচ্ছেন। ট্যুরিস্ট ভিসা হলে কেনাকাটা কিছুটা হয়।’
‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে ভারত আশ্বস্ত হচ্ছে না বলেই হয়তো’ এখনো ভিসা নিয়ে এমন কড়াকড়ি করছে দেশটি। এ অভিমত দিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, ‘প্রভাব তো নেতিবাচক বটেই। যাতায়াত কমা মানে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই নানান জটিলতায় পড়েন। দুই দেশের পিপল টু পিপল কানেক্টিভিটি ব্যাহত হয় নিশ্চিভাবেই।
লাভ না হলেও ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের কঠোরতার কারণ কি কেবলই নিরাপত্তা না এর পেছনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও আছে, উঠছে এমন প্রশ্নও। তবে এ ক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তার প্রসঙ্গ মুখ্য হয়ে ওঠে, তবে কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে বলেই মত এই বিশ্লেষকের।


আরো সংবাদ



premium cement