২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন হতে পারে : উপদেষ্টা

১৫ বছরে ৬ হাজারের বেশি মানুষকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে

-


নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নামের মধ্যে ‘নৌকা’ শব্দটি থাকায় এই মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘জাহাজ ও বন্দর মন্ত্রণালয়’ করার প্রস্তাব করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
গতকাল রাজধানীর রমনায় বিআইআইএসএস মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের সংলাপ-প্রসঙ্গ : মানবাধিকার’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
সংলাপে আসকের নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, গত ১৫ বছরে ৬ হাজারের বেশি মানুষকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি নৌকা চালাই না, জাহাজ চালাই। এজন্য নৌকা থাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে জাহাজ ও বন্দর মন্ত্রণালয় করার প্রস্তাব করা হবে।
হাসিনা আর তিন-চার দিন ক্ষমতায় থাকলে আমাকে আয়নাঘরে যেতে হতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমিসহ কয়েকজন তাদের টার্গেটে ছিলাম। কিন্তু ৫ আগস্ট পতন হওয়ায় এ দফায় বেঁচে গেছি। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ যেভাবে গুলি করেছে তাতে তাদের এ দেশের পুলিশ মনে হয়নি। তাদের এমন মনোভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল।

পুলিশের হাতে যুদ্ধের অস্ত্র দেয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কোন সময় তাদের এ অস্ত্র দেয়া হয়েছে, কেন দেয়া হয়েছে এটি তদন্ত হওয়া দরকার। পুলিশের অস্ত্র কিভাবে লুঙ্গি পরা বাইরের লোকের হাতে গেল? কারা দিলো? তার তদন্ত দরকার। পুলিশ তদন্ত কমিশন গঠন করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। শেখ হাসিনা নাৎসিদের মতো কাজ করেছেন মন্তব্য করে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, তিনি এত মানুষ মেরেছেন, তারপরও তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। আন্দোলনে শুধু দেড় হাজারের মতো মানুষ মরেনি, অনেকের দু’চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, অনেকে বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে। তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। এসব মানুষের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ফান্ড গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন তালিকা হচ্ছে। চূড়ান্ত হলে তাদের সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।

আগামীতে রাজনৈতিক দলের সাথে আরো বৈঠক করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আর কয়দিন থাকতে পারব জানি না, তবে চূড়ান্তভাবে রাজনৈতিকদলগুলোই দেশ চালাবে। এজন্য যেসব কমিশন গঠন করা হয়েছে তারা এবং সরকারের পক্ষ থেকেও সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করা হবে। আমাদের সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা দরকার। আর অবশ্যই রোডম্যাপ দেয়া হবে। তবে প্রশাসন সাজানো, বিভিন্ন পক্ষের আন্দোলন, বন্যার কারণে কিছুটা সময় লাগছে বলে তিনি জানান।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেয়া ৬২৬ জনের নামের তালিকা প্রকাশ বিষয়ে ক্যাবিনেটে বিস্তারিত কথা হবে বলেও জানান নৌপরিবহন উপদেষ্টা। দেশে একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী সুশীলসমাজ গড়ে ওঠা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খান বলেন, দেশ ক্যান্সারে আক্রান্ত। দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে কিছুটা সময় দিতে হবে। দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সময় দিতে হবে। তাড়াহুড়া কারো কাম্য হতে পারে না।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, গত ১৫ বছরের ৬ হাজারের বেশি মানুষ ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি সেনাবাহিনীর নিম্ন থেকে উচ্চ পদের অনেক লোককেও হত্যা করা হয়েছে মোল্লা, জামায়াত ট্যাগ দিয়ে। এমনকি আওয়ামী লীগের ভিন্ন মত পোষণকারী কিছু লোক এবং কিছু ব্যবসায়ীকেও ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। ক্রসফায়ারের নামে যেসব গল্প বলা হতো তা মিথ্যা, মূলত এটি ছিল ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড। তিনি ক্রসফায়ারকে জাস্টিফাই করা ম্যাজিস্ট্রেটদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। আয়নাঘরসহ যত অত্যাচারকেন্দ্র ছিল সেগুলো বিচারের উপকরণ হিসেবে সংরক্ষণের আহ্বান জানান এ মানবাধিকার কর্মী। ক্রসফায়ারে জড়িত অফিসারদের বিদেশে যাওয়া বন্ধে উদ্যোগ নেয়ারও দাবি জানান তিনি।

মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, যেভাবে গণহারে মামলা দেয়া হচ্ছে এতে মামলায় যেসব উপাদান দেয়া হচ্ছে তাতে শেষ পর্যন্ত ভালো সুফল আসবে না। এজন্য নির্দিষ্ট হত্যার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে মামলা দেয়া প্রয়োজন। তিনি মানবাধিকার কমিশন আইন সংশোধনের দাবি জানান। যে যেখানে গুম হয়েছে ওই এলাকায় তখন কোন পুলিশ অফিসার ছিল তাকে খুঁজে বের করলেই সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এবি পার্টির যুগ্ম-সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও হেফাজত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আরো আলোচনা করেন, গণফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জি নাইনের সাধারণ সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, রাজনীতি বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার, শিক্ষার্থী নাইমা আক্তার রীতা, তৌহিদ সিয়াম প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement