২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

জামিনে মুক্তি পেয়েই জোড়া খুনের আসামি ‘পিচ্চি হেলাল’

-

ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল। দীর্ঘ ২৪ বছর পর গত ১৫ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা এই শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল। তার মুক্তির পরই মোহাম্মদপুর ও এর আশপাশ এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ড। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই ঘটছে সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ড। গত সাত দিনে মোহাম্মদপুর এলাকায় অন্তত সাতটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ আটটি মামলার বিচার চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজারের সাদেক খান আড়তের সামনে নির্মাণশ্রমিক নাসিরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সুমন বিশ্বাস বাদি হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় গত রোববার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নাসিরের পরিচিত শাওনের মোটরসাইকেলযোগে বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নাসিরকে গুরুতর আহত করে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে নাসিরের স্বজনরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রাতেই মৃত্যু ঘটে নাসিরের। এই হত্যা মামলায় ইমামুল হাসান ওরফে পিচ্ছি হেলাল, রাহুল, শাহরুখ, রয়েল, পারভেজ, ইমন ওরফে এলেক্স ইমনসহ মোহাম্মদপুরের আরো অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। একইভাবে হত্যা করা হয়েছে মুন্নাকে। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার সাদিক খান আড়তের সামনে নাসির ও মুন্নাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় দু’টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যে মিরাজ মোল্লা নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। নিহত নাসির মাদারীপুরের ডাসার পশ্চিম বালি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পরিবার নিয়ে মোহাম্মদপুরে থাকতেন।
জানা গেছে, গত ১৫ বছর ওই এলাকায় চাঁদাবাজি করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। সক্রিয় ছিল যোশেফ-হারিছ বাহিনী। রাজিব, সলু, সাদেক খানের বাহিনীও সক্রিয় ছিল। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন ওই এলাকার মানুষ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যায় তারা। এর মধ্যেই কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন পিচ্চি হেলাল। মোহাম্মদপুর, বসিলা, আদাবর, লালমাটিয়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম শুরু করেন পিচ্চি হেলাল। এখন এককভাবে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ করছে পিচ্চি হেলাল। পিচ্চি হেলালের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুরের বাসস্ট্যান্ড, মার্কেট, ফুটপাথ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি শুরু হয়। এভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে ইতোমধ্যে সংঘর্ষ, রক্তারক্তি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সূত্র মতে, শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল কারাগারে থাকতেই মোহাম্মাদপুরের বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া ছিলেন। জেলে বসেই মোহাম্মাদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হতো পিচ্চি হেলালের নামে। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতা, জনপ্রতিনিধিরাও চাঁদার ভাগ দিতেন পিচ্চি হেলালকে। গোয়েন্দারা জানান, পিচ্চি হেলাল মুক্তির পর এখন পুরো মোহাম্মাদপুরে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর বাহিনী। যার কারণেই মোহাম্মাদপুরের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে শীর্ষ সন্ত্রাসীর একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ওই তালিকায় পিচ্চি হেলাল অন্যতম। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। সেই থেকেই জেলে ছিল হেলাল।

 


আরো সংবাদ



premium cement