২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী দিতে হবে

-


দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। তবে এ বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তা দাখিল করতে বলা হয়েছে। এটি সব কর্মচারীর জন্যই বাধ্যতামূলক। গতকাল রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
তিনি বলেন, সারা দেশে ১৫ লাখের মতো সরকারি কর্মচারী আছেন। তাদের ‘সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি, ১৯৭৯’ এর আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। সম্পদের হিসাব সিলগালা করা খামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। সম্পদ বিবরণীতে যদি ভুল তথ্য কিংবা গোপন এমন কোনো তথ্য থাকে যা মিসলিড করে, এটি হবে ১৯৭৯ সালের বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অনুশাসন মালা সব কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকারিভাবে কর্মচারী বলা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রণীত নির্ধারিত ছকে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে হবে। ছকটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর বা সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, বিজ্ঞ আদালতের আদর্শ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সম্পদ বিবরণীর তথ্য সম্পূর্ণ অংশ বিশেষ হস্তান্তরযোগ্য নয়। সম্পদ বিবরণী অতি গোপনীয় দলিল বিধায় এ ক্ষেত্রে ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ প্রযোজ্য হবে না।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ (পরে ২০০২ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী সব সরকারি কর্মচারীর জন্য সম্পদ বিবরণী দাখিল করা আবশ্যক। বিদ্যমান নিয়মে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিতে হয়। এরপর পাঁচ বছর অন্তর সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেয়ার নিয়ম। দুর্নীতি রোধ ও চাকরিজীবীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আচরণ বিধিমালায় এমন নিয়ম থাকলেও কাগজের এই নিয়ম মানা হতো না বললেই চলে। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এখন অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। আচরণ বিধিমালা প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, প্রয়োজনের নিরিখে নিয়মাবলি সরকার সময়ে সময়ে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের এখতিয়ার সংরক্ষণ করে। তারই আলোকে এখন বছরভিত্তিক করা হয়েছে।
জানা যায়, বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১ সেপ্টেম্বর এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ-বিবরণী দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়। তিনি বলেন, আগে পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার বিধান ছিল। এখন প্রতি বছর সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। ক্যাডার/নন-ক্যাডার (নবম থেকে তদূর্ধ্ব গ্রেড) কর্মকর্তা তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের কাছে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করবেন। গেজেটেড/নন- গেজেটেড কর্মকর্তা/কর্মচারীরা (দশম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড) নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের সম্পদ-বিবরণী দাখিল করবেন।

সম্পদের হিসাব লুকালে চলে যেতে পারে সরকারি চাকরি : মোখলেস উর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা কোনো ভুল তথ্য প্রদান কিংবা তথ্য গোপন করা হলে বা সম্পদের কোনোরূপ অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪(৫)(গ) উপবিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর জন্য লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড আরোপের বিধান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তিরস্কার পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, দায়িত্বে অবহেলার কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ আদায়, বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হচ্ছে লঘুদণ্ড। অন্য দিকে গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে- নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি থেকে অপসারণ ও বরখাস্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন মোখলেস উর রহমান।

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কারো বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ হলে তখন আর এই তথ্য গোপনীয়তার মধ্যে থাকবে না। আয়করযোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতি বছরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আয়কর বিবরণী জমা দেন, যেখানে সম্পদের বিবরণীও উল্লেখ করার বিধান রয়েছে। তবে এটির সাথে সব সরকারি কর্মচারীর সম্পদ বিবরণীর সম্পর্ক নেই বলে জানান সচিব। অর্থাৎ সব কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হবে। একপর্যায়ে তা অনলাইনে হবে জানিয়ে সচিব বলেন, অনলাইন হলে দেখা যাবে কার কত সম্পদ বা অবিশ্বাস্য হলে যন্ত্রই সঙ্কেত দেবে। অনলাইনে হলে যাচাইটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে। আমি আশাবাদী, এটি দুর্নীতিতে একটি লাগাম টানা হবে।

চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার খবর গুজব : সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা হচ্ছে- এটা নিয়ে অনেক জায়গায় নিউজ হচ্ছে। একটা দরখাস্ত এসেছে, আপনারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, আমার একটাই উত্তর গুজবে কান দেবেন না। আমি এক কথায় বলে দিলাম, গুজবে কান দেবেন না।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার দাবির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে গত ১৮ সেপ্টেম্বর চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনে একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি দেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement