০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

আরবের খেজুর এবার দেশের মাটিতে

আরবের খেজুর এবার দেশের মাটিতে - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে দেশেই এ ফল উৎপাদনের দ্বার খুলতে যাচ্ছে। ১০টি জাত নিয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে এ চাষ। কয়েকটি জাত বাছাই করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে জানান কৃষি বিজ্ঞানীরা। পুষ্টিবিদরা বলেছেন, খেজুরটি দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হলে সহজে পূরণ হবে পুষ্টি চাহিদা। আর আমদানি করতে হবে না।

উল্লেখ্য, শুষ্ক অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্য। মধ্যপ্রাচ্যের সাথে কিছুটা মিল রয়েছে মেহেরপুর অঞ্চল। তারপরও বেলে ও বেলে-দো-আঁশ মাটিতে খেজুর ভালো জন্মে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে সব ধরনের মাটিতেই খেজুর গাছ চাষ করা যায়। তবে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা থাকতে হবে।

মাটির গুণগত মান ও আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে মুজিবনগরে সৌদি আরবের খেজুর চাষ শুরু হয়েছে। ‘মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়া কেন্দ্র মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স চত্বরে ২০১৪ থেকে খেজুরের চাষ শুরু করে। মধ্যপ্রাচ্য দেশ কাতার, ওমান, দুবাই, ইরান, সৌদি, সোদান থেকে আজওয়া, আম্বার, লুলু, খালাছ, ডেগলেটনুর, কালমি, মাকতুম, ছুক্কারি, বাহারি ও মারইয়াম ১০টি জাতের বীজ নিয়ে আসেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়া। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বীজ বপন করা হয় কুষ্টিয়া সেচ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেই বীজের দুই হাজার চারা রোপন করা হয় মুজিবনগর কমপ্লেক্সে। বপনের আড়াই বছরের মধ্যে ৪ টি গাছে ফলও আসে। এ বছরে ১০টি গাছে খেজুর ধরে। মধ্যপ্রাচ্যে যে মান ও স্বাদের ফল হয়, সেই মানের ফলই গাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

খেজুর গাছের পরাগায়ন পোকা-মাকড়, মৌমাছি কিংবা বাতাসের মাধ্যমে খুব কম হয়। তাই হাত দিয়ে অথবা মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরাগায়ণ করতে হবে। বাগানে ১০০টি স্ত্রী গাছের সাথে মাত্র ১টি পুরুষ গাছ থাকলেই পরাগায়ণের জন্য যথেষ্ট। পরাগায়ণ করতে হলে স্ত্রী গাছের ফুল চুরমি ফেটে বাইরে আসার পর পুরুষ গাছের পরাগরেণু পাউডার নিয়ে স্ত্রী গাছের পুষ্পমঞ্জুরিতে লাগিয়ে দিয়ে চুরমির অগ্রভাগ রশি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। ২/৩ দিন পর পর পুনরায় পরাগায়ণ করলে ভালো ফল হয়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়া জোনের আওতায় মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স চত্বরে খেজুর বাগানের তত্বাবধায়ক মহিবুল ইসলাম বলেন, খেজুরের চারা রোপণ করতে হলে ৩ ফুট গভীর ও ৩ ফুট লম্বা এবং ৩ ফুট আড়াআড়ি গর্ত বানাতে হবে। উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে দিতে হবে। গর্তের মাটি ১-২ দিন রোদে শুকিয়ে নিলে ভালো হয়। পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মাটির সাথে গুড়া বিষ মেশাতে হয়। প্রতিটি গাছের গোড়ায় ৮ থেকে ১০ কেজি গোবর সার মেশাতে হবে। চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন পরে মিশ্র সার গাছের কমপক্ষে ২ থেকে ৩ ফুট দূরে মাটিতে দিতে হয়। পানি স্প্রে করতে হবে। চারা রোপণের পর চারার গোড়া যেন শুকিয়ে না যায় আবার অতিরিক্ত পানিতে যেন কাদা না জমে জমে সে দিকে খেয়াাল রাখতে হবে। একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছের দূরত্ব হবে ১৫ থেকে ২০ ফুট। দিনে কমপক্ষে ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা যাতে রোদ থাকে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। তাতে গাছের বৃদ্ধি ও রোগ-বালাই কম হবে। একর প্রতি ১০০ থেকে ১৫০টির বেশি গাছ রোপণ করা যাবে না।

ডা. সজীব উদ্দিন স্বাধীন বলেন, খেজুর খুবই পুষ্টিমান। ১ কেজি খেজুর ৩ হাজার ৪৭০ ক্যালরি শক্তি যোগান দেয়। খেজুরে গ্লুকোজ, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, তামা, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসকরবিক এসিডসহ নানা উপাদান রয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শহীদুল্লাহ জানান, এই খেজুর চাষে কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বর্ষাকালে পুষ্পমুঞ্জরীকে ঢেকে দিতে পারলে মধ্যপ্রাচ্যের মতই ফল উৎপাদন করা সম্ভব। না হলে খেজুরচাষে সুফল পাওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, মেহেরপুরের মাটিতে সব ধরণের আবাদ সম্ভব। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি খেজুর চাষের জন্য উপযোগী।


আরো সংবাদ



premium cement