১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইউএসবি-সি চার্জিং পোর্টসহ আরো যা রয়েছে আইফোন ১৫-তে

ইউএসবি-সি চার্জিং পোর্টসহ আরো যা রয়েছে আইফোন ১৫-তে - ছবি : সংগৃহীত

নতুন আইফোনে লাইটনিং চার্জিং পোর্ট ব্যবহার করা হবে না বলে নিশ্চিত করেছে অ্যাপল। ইউরোপিয় ইউনিয়ন বাধ্য করার পর এমন সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

মঙ্গলবার বার্ষিক এক অনুষ্ঠানে আইফোন ১৫ উন্মোচন করার পরে এই টেক জায়ান্ট জানিয়েছে, ‘বিশ্বজুড়ে গ্রহণযোগ্য মান’ হিসেবে তারা ইউএসবি-সি কেবল ব্যবহার করবে।

অনুষ্ঠানে আরো বেশি উন্নত চিপ সমৃদ্ধ নতুন একটি অ্যাপল ওয়াচ (ঘড়ি) উন্মোচন করা হয়েছে।

কিন্তু এক প্রযুক্তি বিশ্লেষক বলেছেন, ‘সংবাদ শিরোনাম হতে পারে’ এমন চমক দেয়ার মতো কোনো তথ্য অ্যাপলের কাছ থেকে এবার না আসায় অনেকেই হতাশ হতে পারে।

প্রযুক্তি বিশ্লেষক সংস্থা সিসিএস ইনসাইটের বেন উড বলেছেন, ‘আইফোন এবং ওয়াচ যে পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সেখান থেকে নতুন আইফোনটি খুব বেশি চমক জাগানোর মতো নয়। এ থেকে বুঝা যায় যে আইফোন এবং ওয়াচ ডিভাইসগুলো কতটা পরিমার্জিত হচ্ছে এবং প্রতিবছর সত্যিকার অর্থে বড় কোনো আপডেট নিয়ে আসাটা কতটা কষ্টকর।’

অ্যাপল একটি ইউএসবি-সি-টু-লাইটনিং পোর্ট অ্যাডাপ্টর বাজারে এনেছে যার দাম পড়বে ২৯ পাউন্ড বা ৩৬ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় চার হাজার টাকার মতো।

নতুন আইফোন হ্যান্ডসেট আগামী সপ্তাহে বাজারে আসবে। এতে ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো বিকল্প একটি চার্জিং পোর্টের ফিচার যোগ করা হলো।

অ্যাপল জানিয়েছে, বর্তমানে যেসব ইউএসবি-সি কেবল অনেক অ্যাপল ল্যাপটপ ও আইপ্যাডে কাজ করে, সেগুলো নতুন ভার্সনের এয়ারপড প্রো এয়ারফোন এবং তারযুক্ত এয়ারপড হেডফোনের ক্ষেত্রেও কাজ করবে।

এর আগে ইউরোপিয় ইউনিয়ন অ্যাপলকে তাদের মালিকানাধীন চার্জিং পোর্ট বাতিল করতে বলেছে, যেন ভোক্তাদের জীবন সহজ হয়, অর্থ সাশ্রয় হয় এবং একই চার্জার ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইসে ব্যবহারের মাধ্যমে ই-বর্জ্য উৎপাদন কমানো যায়।

অনেকে অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন, এ পদক্ষেপের কারণে সামনের বছরগুলোতে বাতিলকৃত কেবলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

এর প্রতিক্রিয়ায় অ্যাপল মঙ্গলবারের উন্মোচন অনুষ্ঠানে তাদের নতুন ডিভাইসগুলোর বিষয়ে পরিবেশগত কিছু প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যাপল ওয়াচ রেঞ্জকে প্রথমবারের মতো কার্বন নিউট্রাল বা কার্বন নিরপেক্ষ করা।

নতুন ওয়াচ এবং আইফোনের ব্যাটারি ও অন্য যন্ত্রাংশে রিসাইকেল করা উপাদান আরো বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

কোম্পানিটি নিশ্চিত করেছে, তারা তাদের আনুষঙ্গিক কোনো পণ্যে চামড়া আর ব্যবহার করবে না এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তারা তাদের ব্যবসাকে কার্বন নিরপেক্ষ করে তুলবে।

অ্যাপলের প্রধান টিম কুক বলেছেন, ‘নতুন আইফোন ১৫ রেঞ্জটি এ পর্যন্ত তৈরি করা আইফোনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন।’

আইফোন ১৫ এবং ১৫ প্লাস-এ স্ক্রিন আরো বেশি উজ্জ্বল করা হয়েছে, ক্যামেরা সিস্টেমও আগের চেয়ে উন্নত।

এছাড়া আইফোন ১৫ প্রো এবং প্রো ম্যাক্সে টাইটানিয়াম ফ্রেম যুক্ত করা হয়েছে, এর মানে হচ্ছে এটির শক্তি আগের তুলনায় বেড়েছে।

প্রো এবং ম্যাক্সে আগের মিউট সুইচের জায়গায় এখন একটি ‘অ্যাকশন বাটন’ রয়েছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফাংশন ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করা যাবে।

নতুন অ্যাপল ওয়াচে জেশ্চার কন্ট্রোল ফিচার রয়েছে। অর্থাৎ যে হাতে ডিভাইসটি পরা হবে, ওই হাতে দুই আঙ্গুল দিয়ে এক সাথে আলতো করে দুটি চাপ দিয়েই পরিধানকারী ব্যক্তি কোনো ফোনকলের জবাব দিতে বা সেটি বিচ্ছিন্ন করতে পারবেন।

নতুন আইফোনগুলো আগের আইফোনগুলোর তুলনায় খুব বেশি আলাদা নয় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

তারা অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, ভোক্তারা কি অতিরিক্ত দাম দিয়ে এগুলো কিনতে রাজি হবে?

নতুন আইফোনের দাম কত?
যুক্তরাজ্যে আইফোন ১৫-এর দাম ৭৯৯ পাউন্ড। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় এক লাখ নয় হাজার টাকা থেকে শুরু হবে।

আর আইফোন ১৫ প্রো-এর দাম ৯৯৯ পাউন্ড থেকে শুরু হবে অর্থাৎ এক লাখ ৩৬ হাজার টাকার বেশি।

পিপি ফোরসাইটের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্লেষক পাওলো পেসক্যাটর বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে সঙ্কটের এই সময়টাতে নতুন ডিভাইসের জন্য টাকা বের করতে ভোক্তাদের রাজি করানোটা সহজ হবে না। অনেকে নতুন ফিচারটিকে বাড়তি সংযোজন হিসেবে দেখবেন, যদিও এগুলো সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে আরো বেশি বাড়াবে যা অ্যাপলের মূল ব্যবহারকারীদের জন্য অমূল্য।’

মঙ্গলবার অ্যাপলের শেয়ার কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে।

গত সপ্তাহে সোজা নিম্নমুখী পতনকে নতুন মডেল উন্মোচন ঘুরিয়ে দিতে পারেনি। চীনের সরকার কর্মকর্তাদের আইফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করবে এমন প্রতিবেদনের পর অ্যাপলের শেয়ারের পতন হয়।

চীনে হুয়াওয়ের নতুন স্মার্টফোন সিরিজ বাজারে আনার পর তা বিনিয়োগকারীদের অস্বস্তিতে ফেলেছে।

বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে রফতানি কমে এসেছে। এ সময়ে ২৯৪ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ফোন রফতানির পরিবর্তে তা কমে এখন ২৬৮ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক বড় কোম্পানিগুলোর তুলনায় অ্যাপলের চালান কিছুটা কম পরিমাণে কমেছে।

প্রযুক্তি-বিষয়ক গবেষক প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের হিসাব অনুযায়ী, অ্যাপলের চালান সাড়ে ৪৬ মিলিয়ন থেকে কমে ৪৫ দশমিক তিন মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।

আইফোনের শুরু যখন
২০০৭ সালে বাজারে এসেছিল এমন একটি মোবাইল ফোন, যা সারাবিশ্বের যোগাযোগের প্রযুক্তি এবং এর সামাজিক ভূমিকার ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিল।

ওই বছরের জানুয়ারিতে অ্যাপলের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবস স্যান ফ্রান্সিসকোয় এক অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো উন্মোচন করেছিলেন আইফোন নামে এক নতুন ধরনের মোবাইল ফোন। যা বিশ্বের কোটি কোটি লোকের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

আজ আমরা যাকে বলি স্মার্টফোন, তার সূচনা এখান থেকেই।

এই ফোনের ছিল একেবারে নতুন ধরনের টাচস্ক্রিন, সহজে ব্যবহার করা যায় এমন ইন্টারফেস, আর সুন্দর ডিজাইন। সব মিলিয়ে দেখা যায় একটা আইফোন হাতে থাকলে আপনার যেন আর কিছুরই দরকার নেই।

আপনি এতে গান শুনতে পারেন, ছবি তুলতে পারেন, ভিডিও স্ট্রিম করতে পরেন, ইমেইল করতে পারেন, ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারেন। তার সাথে ফোনে কথা বলা তো আছেই।

প্রযুক্তির দিক থেকে এটা ছিল এক নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়া এবং ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা লোকেদের আইফোন দেখে রীতিমতো তাক লেগে গিয়েছিল।

এরপর গত ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় প্রতিবছর নতুন নতুন মডেল উন্মোচন করা হয়েছে আইফোনের, আর বিশ্বজুড়ে নতুন একটি আইফোনের জন্য উন্মাদনাও যেন বছরের পর বছর ধরে বেড়েছে।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement