হুয়াওয়ে ও শাওমি নিয়ে উদ্বিগ্ন লিথুয়ানিয়া
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:৪৫
লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, ভোক্তারা যেন চীনা ফোন ছুঁড়ে ফেলে দেয় এবং এই মডেলের নতুন চীনা ফোন না কেনে।
দেশটির জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সেন্টার চীনা ফোন প্রস্তুতকারকদের তৈরি ফাইভ-জি মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে দেখেছে।
তারা দাবি করছে যে, শাওমি ফোনের ভেতরে এমন যন্ত্র বসানো আছে যার মাধ্যমে ফোনে সেন্সরশিপ চালানো যায়। আর হুয়াওয়ে ফোনের একটি মডেলে তারা নিরাপত্তা ত্রুটি পেয়েছেন।
হুয়াওয়ে বলছে ফোন ব্যবহারকারীর কোনো তথ্য বা ডেটা বাইরে কাউকে পাচার করা হয় না এবং শাওমি বলেছে তাদের ফোনে ব্যবহারকারীদের যোগাযোগ সংক্রান্ত কোনো কিছুই সেন্সর করা হয় না।
দেশটির প্রতিরক্ষা বিষয়ক ডেপুটি মন্ত্রী মার্গিরিস আবুকেভিসিয়াস বলেছেন, আমাদের সুপারিশ হল নতুন চীনা ফোন না কেনার জন্য এবং যারা এসব মডেলের চীনা ফোন কিনেছে তারা যেন যত দ্রুত সম্ভব তা ফেলে দেয়।
শাওমিকে নিয়ে সেন্সরশিপের অভিযোগ লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শাওমির এমআই টেন-টি ফাইভ জি বিখ্যাত মডেলের ফোনটির ভেতর এমন সফটওয়্যার আছে যা ‘ফ্রি তিব্বত’,‘তাইওয়ান দীর্ঘজীবী হোক’, বা ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন’ এসব কথা শনাক্ত করতে এবং সেগুলো সেন্সর করতে পারে।
এই রিপোর্টে ৪৪৯টির বেশি শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো শাওমি ফোনের ডিফল্ট ইন্টারনেট ব্রাউজারসহ সিস্টেম অ্যাপ সেন্সর করতে পারে বলে বলা হয়েছে।
ইউরোপে ব্যবহৃত এই ফোনের মডেলগুলোতে ফোনের বিল্ট-ইন এই উপকরণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, কিন্তু লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলছে, দূর-নিয়ন্ত্রিতভাবে এই সফটওয়্যার যে কোনো সময় চালু করে দেয়া যায়।
তবে শাওমির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘শাওমির কোনো ফোনে ব্যবহারকারীদের কোনোরকম যোগাযোগ বার্তা সেন্সর করা হয় না।’
তিনি আরো বলেন, শাওমি তাদের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কোনোরকম ব্যক্তিগত আচরণ কখনই সীমিত বা ব্লক করেনি-ভবিষ্যতেও করবে না। যেমন তারা ফোনে কী খুঁজছেন বা সার্চ করছেন, কাকে ফোন করছে, ওয়েবে কী ব্রাউজ করছেন, বা তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের কমিউনিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন কিনা এসব কখনই তারা সেন্সর করে না।
শাওমি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের অধিকার সংক্রান্ত ইইউ-র আইন, যা জেনারেল ডাটা প্রোটেকশন রেগুলেশন বা জিডিপিআর নামে পরিচিতি, তা মেনে কাজ করে বলে ওই মুখপাত্র বলেছেন।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ফোনে ব্যবহৃত যেসব তথ্য এনক্রিপটেড বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, শাওমি ফোন সেসব তথ্য সিঙ্গপুরের একটি সার্ভারে পাচার করে দিচ্ছে।
‘এটা শুধু লিথুয়ানিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাই নয়, বিশ্বের যেসব দেশে শাওমি ফোন ব্যবহার হয়, সব দেশের জন্যই এটা গুরুত্বপূর্ণ,’ জানিয়েছে লিথুয়ানিয়ার জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সেন্টার।
শাওমির স্মার্টফোনের দাম সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা হু হু করে বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর একই সময় শাওমি ফোনের বিক্রি ৬৪ শতাংশ বেড়ে গেছে।
হুয়াওয়ে পি-ফর্টি ফোন
এই প্রতিবেদনে হুয়াওয়ে পি-ফর্টি মডেলের ফোনেও একটি নিরাপত্তা ত্রুটির কথা তুলে ধরে হয়েছে। তাদের মতে, এই ত্রুটি ব্যবহারকারীদের জন্য সাইবার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের একটা ঝুঁকি তৈরি করবে।
‘হুয়াওয়ের সরকারি অ্যাপ স্টোর, অ্যাপ গ্যালারি, ব্যবহারকারীদের তৃতীয় একটি ই-স্টোরে নিয়ে যায়, যে স্টোরের কিছু কিছু অ্যাপলিকেশন ভাইরাস আক্রান্ত বা ক্ষতিকর বলে মূল্যায়ন করেছে ভাইরাস প্রতিরোধ সফটওয়্যার, জানানো হয়েছে লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দেশটির জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্রের যৌথ প্রতিবেদনে।
হুয়াওয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন যেসব দেশে তাদের ফোন ব্যবহার করা হয়, তারা সেসব দেশের আইন এবং নিয়মবিধি মেনে চলে এবং ভ্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সাইবার নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়।
‘হুয়াওয়ে ফোনে ডিভাইসে ব্যবহার করা কোন ডেটা কখনই ফোনের বাইরে নেয়া হয় না,’ বলেছেন ওই মুখপাত্র।
‘অ্যাপ গ্যালারি একজন ভোক্তার শুধুমাত্র সেসব তথ্যই সংগ্রহ এবং প্রসেস করে, যেগুলো তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ সার্চ, ইনস্টল এবং ম্যানেজ করার জন্য প্রয়োজন। ঠিক যেভাবে সব অ্যাপ স্টোরই কাজ করে থাকে।’
তিনি আরো বলেন, ব্যবহারকারী ‘যে অ্যাপ ডাউনলোড করছেন তা নিরাপদ কিনা’ তা নিশ্চিত করার জন্য হুয়াওয়ে নিরাপত্তা বষয়ক যাচাই বাছাইয়ের কাজও করে।
এই দলটি ওয়ানপ্লাস নামে আরেকটি ফাইভ জি মডেলও পরীক্ষা করে দেখেছে, তবে এই মডেলে তারা কোনো সমস্যা পায়নি।
চীন-লিথুয়েনিয়া টানাপোড়েন
এই রিপোর্ট প্রকাশিত হল এমন এক সময়ে যখন লিথুয়ানিয়া আর চীনের মধ্যে একটা টানাপোড়েন বাড়ছে।
গত মাসে চীন দাবি করে যে লিথুয়ানিয়া বেইজিং থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে সরিয়ে নিক। তারা আরো জানায় লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিউস থেকে তারাও তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেবে।
এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয় যখন তাইওয়ান ঘোষণা করে যে লিথুয়ানিয়ায় তাদের দূতাবাসকে এখন থেকে বলা হবে তাইওয়ানিজ রেপ্রেজেনটেটিভস্ অফিস।
ইউরোপ এবং আমেরিকায় তাইওয়ানের দূতাবাসগুলোতে তাইওয়ানের নাম ব্যবহার করা হয় না। তারা ব্যবহার করে তাইপে নামটি। কারণ চীন এখনও দাবি করে যে তাইওয়ান তাদের অংশ।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা